কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস আজ। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা সেই স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে। কিন্তু করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে এই দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবার ব্যাপক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি প্রশাসন।
তবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার নাজিরপুর স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় সাংসদ মানু মজুমদার, জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী, ইউএনও মো. সোহেল রানাসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
পরে সাড়ে ১১টার দিকে লেংগুরা সীমান্তে সাত শহীদ সামাধিতে গার্ড অব অর্নার শেষে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই এইদিন সকালে দুর্গাপুরের বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকহানাদার ক্যাম্পে রসদ যাবার খবর পান মুক্তিযোদ্ধারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সকল প্রবেশ পথে অ্যাম্বুস করেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পাকহানাদার বাহিনী না আসায় তাদের অ্যাম্বুস প্রত্যাহার করেন।
ফেরার পথে নাজিরপুর কাচারির কাছে পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর ওপর অতর্কিত গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি বিনিময় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন সাত যোদ্ধা।
এই যুদ্ধে শহীদ যোদ্ধারা হলেন, নেত্রকোনার ডা. আব্দুল আজিজ, মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. ইয়ার মাহমুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নুরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন।
সম্মুখ এই যুদ্ধে সাত শহীদকে লেংগুরার ফুলবাড়ী সীমান্তে গনেশ্বরী নদীর পাড়ে সীমান্তে ১১৭২ নম্বর পিলার সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী জানান, নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস মুক্তিযুদ্ধা সংসদ নেত্রকোনা ইউনিট ও ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট নাজমুল হক তারা ভাইয়ের নেতৃত্ব ১৯৮৪ খ্রীঃ প্রথম সাত শহীদের কবর চিন্নিত করে শ্রদ্ধা ও দোয়া মাহফিলসহ দিবসটি মর্যাদায় সহিত উদযাপন করি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। আমি তখন নেত্রকোনা জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার ছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে জেলা থেকে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এবছর সেখানে যেতে পারিনি। তাদের স্মৃতি ও ত্যাগ আজও মনে পড়ে।
কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা জানান, এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত শহীদদের স্মরণে সীমিত পরিসরে এবার কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।