কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় চুরির দায়ে হীরা মিয়া (১৭) নামে এক কিশোরকে নির্যাতনে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা করা হয়েছে। গত সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে চুরির মামলা রুজু করেন উপজেলার মোজাফফরপুর (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের মৃত আব্দুর করিম ভূঁইয়ার ছেলে মো. হুমায়ুন কবির (৪০)। এ চুরির মামলায় ওই কিশোরকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। হীরা মিয়া উপজেলার মোজাফরপুর গ্রামের গোপিনাথ পাড়ার মৃত করিম মিয়ার ছেলে।
আগের দিন (সোমবার) বিকেল ৩টার দিকে ওই কিশোরের মা গুলে আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতনের অভিযোগ এনে চারজনের নাম উল্লেখসহ ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত করে কেন্দুয়া থানায় মামলা রুজু করেন। এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- মো. আলীর দুই ছেলে জামিরুল ইসলাম (৩৪) ও কামরুল ইসলাম (২৭), মৃত হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে এমদাদুল হক ভূঁইয়া (৪৫) এবং মৃত তারু মিয়ার ছেলে শহীদ (৫০)। তারা সকলেই উপজেলার মোজাফফরপুর মড়লপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। শহীদ ছাড়া এ মামলায় তিনজনকে আটক করে গত সোমবার বিকেলেই জেলা আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাদেরকে জেলে প্রেরণ করেন।
চুরির মামলার অভিযোগে জানা যায়, মামলার বাদী হুমায়ুন কবিরের ভাতিজা জামিরুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম গত রবিবার দিনগত রাত সোয়া ১১টার দিকে মোজাফরপুর মাদরাসা বাজার হতে নিজ বাড়ির ফিরছিলেন। এসময় হীরা ওরফে হিলালী একটি জল মটর কাঁধে করে তাদের বসতবাড়ীর পেছনের জঙ্গলে দিকে যাচ্ছে। তাদের সাথে থাকা টর্চ লাইটের ফোকাস করলে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। তাদের ডাক-চিকৎকারে বাড়ির লোকজন টর্চ লাইট ফোকাস করতে করতে হীরাকে মোটরসহ আটক করে। পরে বাদীর চাচাতো ভাই রেনু মাস্টার বসত ঘর সংলগ্ন টিউবওল পাড়ে তার জল মোটরটি নাই। পরবর্তীতে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাই চোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চোর হীরা স্বীকার করে ইতিপূর্বে সে এলাকায় একাধিকবার চুরি করেছে।
এরআগে গত সোমবার বিকেলে কিশোরের মা গুলে আক্তার ছেলে হীরাকে রাতভর মারধর করার অভিযোগে এনে থানায় নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। এতে নির্যাতন মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পানির মটর চুরি করতে গেলে আসামিগণ আমার ছেলেকে ধরে ফেলে। মোজাফফরপুর গ্রামে রুবেল মিয়ার বাড়ির সামনে সুপারি গাছে সাথে বেঁধে রাখে হীরাকে। আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে নিষ্ঠুরভাবে চড়-থাপ্পর মেরে নীলা ফোলা জখমসহ শারীরিক নির্যাতন করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হীরাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করি। কিন্তু আমার ছেলেকে ছাড়ে নাই ও পুলিশের কাছেও সোপার্দ করে নাই। পরে এমদাদুল হক ভূঁইয়ার হাঁসের হ্যাচারীতে শেকল ও রশি দিয়ে বেঁধে রেখে পরের দিন (সোমবার) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নির্যাতন করেছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
কেন্দুয়া থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, অবৈধভাবে কিশোরকে আটকে রেখে আঘাত ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলার পরপরই বিকেলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে আদালত তাদেরকে জেলে প্রেরণ করেন। হীরা কিশোর হলে কি হবে, তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল গ্রামবাসী। সে বিভিন্ন সময়ে চুরি করে গ্রামবাসীকে ক্ষেপিয়ে রাখে। রেনু মাস্টারে জলমোটর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। গ্রামের ক্ষিপ্ত মানুষগুলো তাকে মারপিট করেছে। চোর ধরে আইন হাতে তুলে নেয়ায় নির্যাতন মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
যেহেতু চুরি করে হাতে-নাতে ধরা পড়েছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ায় মামলায় হীরা মিয়াকে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।