দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

চট্টগ্রামের পটিয়ায় নির্মাণাধীন শিকলবাহা কালারপোল সেতুর তিনটি গার্ডার ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পিলারের ওপর গার্ডারগুলো স্থাপনের সময় ক্রেনের তার ছিঁড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নির্মাণকাজে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও ১৩ বছরে সেতুর কাজ শেষ হয়নি। নিম্নমানের কাজ এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এখন গার্ডারধসের ঘটনা ঘটল। ঘটনার পর থেকে তিনজন শ্রমিকের খোঁজ নেই বলেও শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর স্বজনদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ফেলে চলে গিয়েছিল রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স নামের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ। অভিযোগ রয়েছে, হুইপপুত্র শারুন আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাতে কাজ এনে দেন। সূত্র মতে, বর্তমানে ইট, বালু, রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসংশ্লিষ্ট সব সরঞ্জাম সরবরাহ করছিলেন হুইপ সামশুল হকের আত্মীয়-স্বজন।

জানা গেছে, কালারপোল সেতুটি ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়। ২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর একটি স্টিল মিলের জন্য কোল্ড রোল নিয়ে যাওয়ার সময় এমভি সানলাইট নামের একটি বার্জ তৃতীয় ও চতুর্থ স্প্যানে আঘাত করলে ভেঙে পড়ে সেতুটি। সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রথমবার ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সেতু মন্ত্রণালয়। কাজের উদ্বোধন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি পুরনো স্প্যানের ওপর সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করে দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক বছর সেতুটির কাজ করার পর তাদের প্রতিষ্ঠানের লোকসান দেখিয়ে কাজ ফেলে চলে যায়।

দ্বিতীয় মেয়াদে সেতুর জন্য ২০১৭ সালে ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা নতুনভাবে বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে সেতুটির নামকরণ হয়। নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হুইপ সামশুল হকের ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব এবং হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের অত্যাচারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করে পালিয়েছিল। কারণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাগজপত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও বাস্তবে নির্মাণসামগ্রী থেকে শুরু করে শ্রমিক সরবরাহ—সবই করতেন নবাব ও তাঁর লোকজন।

অভিযোগ উঠেছে, গত শুক্রবার সেতুর গার্ডার তোলার কাজে ব্যবহৃত ক্রেনটিও ভাড়ায় সরবরাহ করেছেন নবাবের লোকজন। গার্ডার তোলার সময় সেই ক্রেন বিকল হয়ে গেলে তিনটি গার্ডার ধসে পড়ে খালে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছোট ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বতের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা পারভেজ এই সেতু নির্মাণকাজে বালু সরবরাহ করেন। হুইপের ভাগ্নে মো. লোকমান করেন শ্রমিক সরবরাহ। সেতু নির্মাণকাজের পাথর ও মিক্সচার সরবরাহ করেছেন হুইপপুত্র শারুন।

সূত্র জানায়, হুইপপুত্র শারুন রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্সকে নির্মাণকাজ থেকে হটিয়ে বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক নোয়াখালীর বাচ্চুর কাছ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন নেন ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বসে।

এদিকে গার্ডার ভেঙে পড়ার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় কোলাগাঁও ইউনিয়নের কালারপোল এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও শিকলবাহা ইউনিয়নের মাস্টারহাটের বাসিন্দা আলমগীর বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। আমরা গিয়ে দেখতে পাই সেতুটির গার্ডার ভেঙে পড়েছে।’ তাঁদের অভিযোগ, ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের কারণেই সেতুটি ধসে পড়েছে।

এলাবাসীর অভিযোগ, কালারপোল সেতুর জন্য ১৩ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও পটিয়ার এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই আবারও ধসে পড়ার ঘটনা এলাকাবাসীকে হতাশ করেছে। স্থানীয়রা জানায়, খাল পারাপারে সেতুটি একমাত্র ভরসা হওয়ায় ওই পথে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। কালারপোল লাখেরা উচ্চ বিদ্যালয়, কালারপোল হাজী ওমরা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, কালারপোল অহিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা, এ জে চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে।

এদিকে সেতু নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়নি দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (দোহাজারী) নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘হাইড্রোলিক জ্যাকের (ক্রেন) মাধ্যমে গার্ডার বসানোর সময় জ্যাকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এরপর গার্ডার পড়ে যায়। একটি গার্ডার থেকে আরেকটির দূরত্ব দুই মিটার। একেকটি গার্ডারের ওজন ৩৫ টন, যে কারণে একটির ধাক্কায় অন্য দুটি ধসে পড়ে। এটি আসলে নিছক দুর্ঘটনা।’

তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজ খরচে আবার গার্ডারগুলো স্থাপন করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কালারপোল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মুহাম্মদ সোলায়মান জানান, কতজন নিখোঁজ রয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে দুজন আহত শ্রমিককে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version