৩৪ বছর আগে এই দিনে আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্মগ্রহণ করে এক বালক। ছোট্ট সেই শহর থেকে যে একসময় ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব শুরু করে এবং যা এখনও চলমান।
সেই বালকের নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) এই খুদে ফুটবল জাদুকরের ৩৪তম জন্মদিন।
খবরটা মেসিভক্তদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দের এবং বেদনার। আনন্দের কারণ তো জানাই।
মেসির জন্মদিন বলে কথা! তবে ৩৪ বছর বয়সে পা দেওয়া মানে আর মাত্র কয়েক বছর পরেই হয়তো বুটজোড়া তুলে রাখবেন আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার অধিনায়ক। অর্থাৎ, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার সু্যোগ হয়তো আর বেশিদিন নেই।
২০০০ সালে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে বার্সার টেকনিক্যাল সেক্রেটারি চার্লি রেক্সাচের নজরে পড়েন মেসি। বালক মেসির সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে সেসময় একটি ন্যাপকিন পেপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। এরপর ‘বিস্ময়বালক’ মেসি বার্সার যুব অ্যাকাডেমি ‘লা মেসিয়া’র ঘরে পা রাখেন। ‘গ্রোথ হরমোন ডিসঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত মেসিকে বার্সা সবধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরে যার প্রতিদান সর্বোচ্চ আনুগত্য দিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বয়সভিত্তিক দল থেকে বার্সার মূল দলে জায়গা পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি মেসিকে। ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর মাত্র ১৭ বছর বয়সে এসপানিওলের বিপক্ষে ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয় তার। এরপর আলবাসেতের বিপক্ষে কাতালান জায়ান্টদের হয়ে প্রথম গোলের দেখা পান তিনি। ৮৭তম মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বার্সা। তৎকালীন কোচ ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড তারকা খেলোয়াড় স্যামুয়েল ইতোকে তুলে নিয়ে ১৭ বছর বয়সী মেসিকে নামান। মাঠে নামার মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যেই গোল পেয়ে যান তিনি আর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ক্যাম্প ন্যু ‘মেসি’, ‘মেসি’ বলে চিৎকার করে উঠে।
৩০ নম্বর জার্সি গায়ে বড় আসরে নামা শুরু করলেও খুব শিগগিরই স্বীয় যোগ্যতাবলে আইকনিক ১০ নম্বর জার্সির মালিকানা পেয়ে যান মেসি। সেই থেকে শুরু তার বিশ্বসেরা হওয়ার দৌড়। লা লিগার ইতিহাসে ৪৪০ গোল করার রেকর্ড তার দখলেই আছে।
২০১২ সালে মেসির আসল রূপ দেখতে পায় বিশ্ব। সেবার তার পারফরম্যান্স তাকে ‘ভিনগ্রহের খেলোয়াড়’ হিসেবে অবস্থান এনে দেয়। মাত্র ২৫ বছর বয়সী মেসি সেবার জার্ড ম্যুলারকে ছাড়িয়ে দেশ ও ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে ৯১ গোলের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ১৯৭২ সালে দেশ ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জার্মান কিংবদন্তির গোলসংখ্যা ছিল ৮৫টি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ম্যুলারকে ছাড়িয়ে গেলেও থামেননি মেসি। বরং রিয়াল ভায়োদোলিদের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ের রাতে ম্যাজিক্যাল পারফরম্যান্স দিয়ে চমকে দেন। ২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগার ১৩টি দলের সম্মিলিত গোলের চেয়েও বেশি গোল করেছিলেন মেসি।
মেসি জাদুতে এখন পর্যন্ত ১০টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৭টি কোপা দেল রে, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ৩টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জয় করেছে বার্সেলোনা। শুধুমাত্র নিজ দেশ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এখনও শিরোপার দেখা পাননি তিনি। যদিও ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার খুব কাছ থেকে ফিরেছেন। এই তিনবার ফাইনাল হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছে তার।
২০১৪ বিশ্বকাপ ছিল মেসির জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। সেবার ফাইনালটা প্রায় জিতেই গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু জার্মানির সুপার-সাব মারিও গোৎশে ১১৩তম মিনিটে আচমকা গোল করে আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে ছুরি বসিয়ে দেন। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অবশ্য মেসির হাতেই শোভা পেয়েছিল। কিন্তু ফুটবল জাদুকর তো বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
২০১৯ সালে ফের একবার মেসি রাজত্ব দেখেছে বিশ্ব। পুরো বছর মাঠে রাজত্ব দেখিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর জিতে নেন তিনি। রেকর্ড গড়ার পথে তিনি পেছনে ফেলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। এর আগে দুজনেই সমান ৫টি করে ব্যালন ডি’অরের মালিক ছিলেন। প্রায় একযুগ ধরে চলা বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে একজন আরেকজনকে পেছনে ফেলা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ২৬ বছর বয়সের আগেই ৪টি ব্যালন ডি’অর জেতার কীর্তিও আছে মেসির দখলে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো মেসিযুগের অবসান ঘটবে। বিষাদের সেই মুহূর্ত আসার আগে তার পায়ের জাদু যতবেশি সম্ভব উপভোগ করতে চাইবে ভক্তরা।