তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: কখনো ব্রহ্মপুত্র নদের শীতল হাওয়া, কখনোবা নদীর উত্তাল ঢেউ আবার কখনো নদীর আগ্রাসী ভাঙ্গন-এমনি বাস্তবতায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম কাতলামারীতে জন্ম হয় সফল নারী উদ্যোক্তা রেজবিন হাফিজের। জীবিকার তাগিদে বিদেশ পাড়ি জমানো বাবা আর পল্লী চিকিৎসক মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া রেজবিন দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেঝ। আর তাইতো ডানপিঠে রেজবিন ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন ব্যতিক্রমী কিছু করার। সহপাঠীদের নিয়ে মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘট কিংবা বাঙালি নদীর সাথেও সক্ষতা কম ছিলনা তার। চোঁখের সামনে দেখেছেন নদীর হিংস্রতা। তাই বলে মনোবলের ঘাটতি ছিলনা রেজবিনের। জেলার নবাবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাদিয়াখালি উচ্চ বিদ্যালয় ও সবশেষ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ইসলামী ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকতা পেশায়। চাকুরি করেন সাভারের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে।
৯ বছর আগে ২০১২ সালে স্বামীকে সাথে নিয়ে ‘পিপলস নাইফ ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে ফুটওয়্যার ও লেদার গুডস এক্সেসরিজ কারখানা দেন। পরবর্তীতে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে আশুলিয়ায় ৫০০ স্কয়ারফিটের একটি ঘর ভাড়া করে পিপলস ফুটওয়্যার এন্ড লেদারগুডস নামে জুতার কারখানা তৈরি করেন। শুরতে তৈরিকৃত সেই জুতা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ৭০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় রেজবিন বেগমের তৈরি জুতার বেশ সুনাম ছড়িয়ে পরে। স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও দোকানদার পাইকারি অর্ডার দিতে শুরু করে। এরপর এক বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণ করে ব্যাপক সাড়া পান। অনেক অর্ডারও মিলে সেই মেলায়। একটি বহুজাতিক সু কোম্পানির একটি বড় অর্ডার মোড় ঘুড়িয়ে দেয় উদ্যোক্তা রেজবিন বেগমের ব্যবসার। রেজবিনের আজকের এই অবস্থানে আসতে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার অংশ শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রুপান্তরের প্রয়াসে গড়ে তুলেছেন ‘পিএলজি লেদার ট্রেনিং সেন্টার’।
রেজবিনের বেগমের ৩০০০ স্কয়ারফিটের কারখানায় বর্তমানে দুই শতাধিক কর্মী নিয়মিত কাজ করছে। তৈরি করছে চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল, লেডিস সু, বেল্ট, মানিব্যাগ, লেডিস পার্স, হ্যান্ডব্যাগ, অফিস ব্যাগ, জ্যাকেট। তার তৈরি পণ্য দেশ ছেড়ে বিদেশের বাজারেও সুনামের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। রেজবিন স্বপ্ন দেখেন তার তৈরি ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। এই প্রত্যাশায় অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন দেশ সেরা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উদ্যোক্তা রেজবিন বেগম। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে গত বছর বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান ওঅংশগ্রহণকে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক পুরুষ ও নারী ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা’-২০২০ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে রেজবিন হাফিজ বলেন, সরকারের আন্তরিকতার কারনেই প্রতি বছর দেশে হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আর একটু সহজ করা গেলে আমার বিশ্বাস দেশে বেকার থাকবে না। আর শিক্ষিত যুবরাও চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছনে ছুটবেনা।
নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি রেজবিনের একটাই কথা, হুজুগে কান দিয়ে উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা না করাই ভাল। অবশ্যই বুঝে শুনে এবং আগ্রহ আছে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে কাজ করাই শ্রেয়। তবে কাজ যেটাই হোক না কেন পেশাদারিত্ব না থাকলে কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না।
রেজবিন অনুসারিদের অনুপ্রেরণা যোগাতে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে ‘তরুনিমা’ নামে একটি নাটক । মাসুদ করিম সুজনের রচনা ও পরিচালনায় গত ৫ জুন নাটকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আর টিভিতে প্রচার করা হয়।