সম্পর্কটা ১০ বছরের। এই সময়ে একটা ক্লাবকে মাঝারি সারি থেকে ইউরোপের উঁচুতলায় উঠতে সাহায্য করেছেন। সাফল্য-ব্যর্থতার ভাগীদার হয়েছেন। একই সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইংলিশ লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে। তিনি আসার আগে সিটি তো মধ্যম সারির একটা দল হিসেবেই পরিচিত ছিল। পয়েন্ট তালিকার মাঝামাঝি স্থানেই ঘুরপাক খেত তারা। সেই দলই এখন ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি। ম্যানচেস্টার সিটি এখন লিগ, কাপ জেতে নিয়মিত। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণ করারও সুযোগ পাচ্ছে কদিন পর।
সিটিকে এই পর্যায়ে আনার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যে কয়জনের, তাঁদের মধ্যে সের্হিও আগুয়েরোর নামটা হয়তো ওপরেই থাকবে। ভিনসেন্ট কম্পানি, দাভিদ সিলভা, ইয়ায়া তুরে আর আগুয়েরো—আজকের সফল সিটির মেরুদণ্ড তো গড়ে দিয়েছেন এঁরা। বাকিরা একে একে চলে গেলেও এক আগুয়েরোই ছিলেন এত দিন। সে আগুয়েরোরও বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল সিটিতে। সিটিকে ইউরোপের ওপরতলায় তুলেই ১০ বছর পর নিজের দায়িত্বে ইতি টানছেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। গতকাল লিগে নিজের শেষ ম্যাচটাও খেলে ফেললেন। এভারটনের বিপক্ষে এই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে নেমে প্রমাণ করলেন, ১০ বছর ধরে ঠিক কী কারণে সিটির মূল স্ট্রাইকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
আগুয়েরোর শেষ লিগ ম্যাচ দেখেই কিনা কেভিন ডি ব্রুইনা, রিয়াদ মাহরেজ, ফার্নান্দিনিও, ফিল ফোডেনরা গত রাতে যেকোনো মূল্যে বিদায়ী সতীর্থকে বড় জয় উপহার দিতে চেয়েছেন। এভারটনকে ৫ গোল দিয়েছে সিটি। মাহরেজের জায়গায় ৬৫ মিনিটে মাঠে নেমে আগুয়েরো নিজেই করেছেন জোড়া গোল। তা দেখেই কিনা আরও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন দলের কোচ পেপ গার্দিওলা। হয়তো আগুয়েরোর গোলগুলো দেখে তাঁর মনে হলো, কী রত্ন হারাচ্ছি আমি! এর বিকল্পই–বা পাব কী করে!
ম্যাচ শেষে সেটিই বোঝা গেছে স্পষ্টভাবে। আগুয়েরোকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি আটকাতে পারছিলেন না গার্দিওলা। দাভিদ ভিয়া, ইব্রাহিমোভিচ, রবার্ট লেফানডফস্কিদের মতো স্ট্রাইকারদের কোচিং করানো গার্দিওলা এর আগে কখনো কোনো স্ট্রাইকারের জন্য এভাবে কেঁদেছেন কি না, প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। আগুয়েরোর বিকল্প যে কোনোভাবেই এই বাজারে পাওয়া সম্ভব না, স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেটাই বলছিলেন গার্দিওলা, ‘আমরা ওকে অনেক ভালোবাসি। আমাদের সবার জন্য ও অনেক বিশেষ একজন মানুষ। আমরা ওর বিকল্প পাব না। ও সব সময় নিজের জাত চিনিয়েছে এখানে।’
সিটির ম্যানেজার হিসেবে যখন এলেন, তখনো আগুয়েরোর কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছেন গার্দিওলা। ওসব কথা বলতে গিয়েই বারবার কণ্ঠ ধরে যাচ্ছিল তাঁর, ‘আগুয়েরো, দাভিদ সিলভার মতো খেলোয়াড় এই ক্লাবকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মানুষ ও ফুটবলার—দুই ক্ষেত্রেই ও অনন্য।’