রবিবার, জুন ৯, ২০২৪

দুর্নী‌তির দা‌য়ে অ‌ভিযুক্ত ও জিয়া প‌রিষ‌দ নেতা ঢাবি সিন্ডিকেট সদস্য: নেপথ্যে উপাচার্য

যা যা মিস করেছেন

দুর্নী‌তির দা‌য়ে অ‌ভিযুক্ত ও জিয়া প‌রিষ‌দ নেতা দুই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সদস্য মনোনীত হয়েছেন। অভিযুক্ত এ দুই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য করার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

তাদের একজন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আরেক জন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) থে‌কে আসা জিয়া প‌রিষ‌দের সদস্য হয়েও নীল দল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সদস্য মনোনীত হয়েছেন।

সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হওয়া অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনর রশীদ খান।

 

জানা যায়, অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য করতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বরাবর নাম প্রস্তাব করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এরপর গত ২ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের আগামী দুই বছরের জন্য সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার আদেশ জারি করা হয়।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তথ্য হাতে এসেছে।

এতে দেখা যায়, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নীল দল থেকে এখন সিন্ডিকেট সদস্য হলেও আগের কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি সংগঠন জিয়া পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

শুধু তাই নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৬ সালে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী জিয়া’ নামে জিয়া পরিষদের বের করা স্মরিণিকার ১১৫ পৃষ্ঠায় পরিষদের সদস্য তালিকায় অধ্যাপক মনসুরের ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সেই সময়কার যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক মোহা. এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, “যতটুকু দেখেছি, ১৯৯৫ সাল থেকে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ আলীর ডান হাতই ছিলেন উনি (অধ্যাপক মনসুর)। আমাদের সাথে একসাথে অনেক মিটিং সিটিং করেছেন। পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ যেটা আমাদের সঙ্গে করেছেন। তারপর এখান থেকে চলে যাওয়ার পরে শুনলাম যে উনি আওয়ামী রাজনীতি করেন। এখানে যতদিন ছিলেন, ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমাদের পরিষদের মেম্বারও ছিলেন উনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদকে ফোন দেয়া হয়। প্রতিবেদকের নাম পরিচয় বলার পর তিনি “বলো” বলে সম্মতি দেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য কথাটা বলতেই তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। এরআগেও একই অভিযোগে গণমাধ্যম তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলেননি।

এদিকে অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক অধ্যাপক হারুনর রশিদ খানের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। তিনি রাজধানীর শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘ডিআইএ’র উপপরিচালক রসময় কীর্ত্তনিয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুনর রশিদ খান তার মেয়াদকালের ২৬ মাসে মোট ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৭ টাকা প্রতিষ্ঠানটি থেকে সম্মানি পারিতোষিক হিসেবে ও অন্যান্য বিলের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন। তিনি পদের অপব্যবহার করেছেন নিজের আর্থিক লাভের জন্য। তদন্তে কলেজের সর্বমোট ২৯ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে। কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য কলেজ থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নে গ্রামের মধ্যে প্রায় ৪০০ শতক কৃষি জমি কেনা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি।

কলেজের জমি কেনা-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু নাঈম মো. রাফীর এক নিকটাত্মীয়ের অখ্যাত প্রতিষ্ঠান সারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তির শর্ত অমান্য করে জমির দাম ব্যাংক চেকের পরিবর্তে নগদে পরিশোধ করা হয়, যা অস্বাভাবিক। দ্বিতীয় দফায় কলেজের জন্য ৮৫ শতক জমি কেনায়ও পুরো লেনদেন হয় নগদে। অথচ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল পে-অর্ডার ছাড়া অর্থ ব্যয় না করার। শুধু ৯৭ শতাংশ পরিমাণের একটি জমি কেনায়ই দেড় কোটি টাকা ও রেজিস্ট্রেশনে অন্তত ১৭ লাখ টাকা কলেজের ক্ষতি হয়েছে বলে ‘ডিআইএ’ জানিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গভর্নিং বডির (জিবি) সভাপতি হওয়ার পর অধ্যাপক হারুনর রশিদ নিয়ম বহির্ভূতভাবে মোবাইল ফোন কেনার নামে কলেজ থেকে ৮৩ হাজার ৯৬০ টাকা নগদ নেন। পাশাপাশি বিধি বহির্ভূতভাবে তিনি টেলিফোন ভাতার নামে মাসে চার হাজার করে টাকা নেন।

এক হিসাবে দেখা গেছে, এক অর্থবছরে তিনি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার ৬৫৪ টাকা নিয়েছেন। মোট অর্থ হচ্ছে, নিয়োগ কমিটি বাবদ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৩৫০ টাকা, জিবির মিটিং বাবদ দুই লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ার্কিং গ্রুপ বাবদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল বিল ৪৮ হাজার টাকা, ক্লাস নেয়া বাবদ দুই লাখ টাকা এবং পদোন্নতি কমিটির মিটিং করে ৩০ হাজার টাকা।

অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. হারুনর রশীদ খান বলেন, এ অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভূয়া। আপনি আমার অফিসে আসলে আমি সব ডকুমেন্ট দেখাতে পারবো।

তিনি বলেন, তার দায়িত্বের সময়ে অধ্যক্ষ ও তার গ্রুপের লোকজনকে কোনো ব্যবসা ও লুটপাট করতে দেয়া হয়নি বলে তারা নানা অভিযোগ করছে। পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেয়ার শর্তে অধ্যক্ষ নগদ পাঁচ লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তোলেন। এটি ধরার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা প্রশ্ন‌বিদ্ধ হয়। এ ক্ষেত্রে নাম প্রস্তাব করার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের। তবে তিনি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের যারা আছেন, তাদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

ড. সামাদ বলেন, উপাচার্য আমার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেন নাই। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এখতিয়ার। কখন, কিভাবে নামগুলো গেল তা বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, উনারা আমাদের শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আমাদের সহকর্মী। তোমরা বিষয়টা যেভাবে দেখো। সূত্র: বিবার্তা২৪ ডট নেট

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security