দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলা নিয়ে শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্ক এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক হামলা বন্ধে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এই পরীক্ষায় পড়েছে। সামনের বছরগুলোতে এই দুই নেতার মধ্যে আরো অনেক ইস্যুতে টেনশন বা উত্তাপ দেখা দেবে। কিন্তু বর্তমানে গাজায় যুদ্ধ নিয়ে তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে তাতে এক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট বাইডেন এড়ানোর খুব চেষ্টা করেছিলেন। বার্তা সংস্থা এপিতে লেখা আমির মাদানি এবং ইলেন নিকমায়ার এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন। তারা আরো লিখেছেন, বুধবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউজের দেয়া তথ্যমতে এই যুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমনের প্রত্যাশা করেছেন বাইডেন।

কিন্তু প্রকাশ্যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি গাজায় হামলা অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এর অর্থ হলো, তিনি জো বাইডেনের কথা রাখছেন না। নিজের যুদ্ধংদেহী মনোভাবকে দম্ভ করে ঘোষণা করেছেন। বাইডেনের ফোনকলের জবাবে নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থনকে জোর দিয়ে প্রশংসা করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, ইসরাইল সামনে এগিয়ে যাবে। তবে বাইডেন তার সময় ও শক্তি ব্যবহার করে এই পরিস্থিতিতে আসতে চাননি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার মেয়াদের প্রথম দিকেই পররাষ্ট্রনীতি পশ্চাৎপদ ধাবিত হয়েছে। আগের প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতায় আসার পর পরই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তবে তারা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতা পাননি। সেক্ষেত্রে জো বাইডেন প্রশাসন অন্তর্বর্তী শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে এটাই প্রথম কোনো মতবিরোধ নয়। ২০১০ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরাইল সফরে ছিলেন জো বাইডেন। সেই সময়ে বিরোধপূর্ণ পূর্ব জেরুজালেমে ১৬০০ নতুন এপার্টমেন্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। এতে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিব্রতকর এক অবস্থায় পড়েন। এর পরেই এক নৈশভোজে নেতানিয়াহুকে অপেক্ষমাণ অবস্থায় রাখেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র যে আঘাত পেয়েছে, সেই দাগ মুছার চেষ্টা করেছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু নৈশভোজের পরে এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে একটি বিবৃতি দেন। তাতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে শান্তি আলোচনা শুরু করার প্রচেষ্টা নিয়েছে, ইসরাইলের গৃহীত ওই পদক্ষেপ তা খর্ব করেছে।

পরে ফিলিস্তিন ও সুন্নি আরব দেশগুলোর সঙ্গে ওই অঞ্চলে টেকসই একটি শান্তিতে পৌঁছাতে ইসরাইলের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা। এর ফলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্কে এক বিস্তর ফারাক সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে হোয়াইট হাউজের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন নেতানিয়াহু। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করার চেষ্টা করছিল তখন। ওবামা ও নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্কের এই উত্তেজনার মধ্যে জিউস ফেডারেশনস অব নর্থ আমেরিকায় ২০১৪ সালে বক্তব্য দিতে যান জো বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে সম্পর্কে জটিলতা থাকলেও তিনি এবং নেতানিয়াহু এখনও বন্ধু। বাইডেন একবার নেতানিয়াহুর বিষয়ে বলেছিলেন, ‘বিবি তুমি যা বলো তার সবটার সঙ্গে আমি একমত নই। কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি।’

এখানেই শেষ নয়। ২০১৯ সালের শেষের দিক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠেছে। বিভিন্ন দলে প্রাইমারি নির্বাচন হচ্ছে প্রার্থী বাছাইয়ের। সেখানে এক নির্বাচনী প্রচারণায় প্রশ্নোত্তর পর্বে নেতানিয়াহুকে ‘বিপরীতধর্মী’ এবং ‘উগ্র ডানপন্থি’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন বাইডেন। তিনি ফিলিস্তিনি নেতাদেরকে সংঘাত সৃষ্টিতে উত্তেজনা উস্কে দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। অভিযোগে বলা হয়, তারা প্রতিজন ইহুদিকে উস্কে দিচ্ছেন। তিনি ইসরাইলি নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ‘একটি পাস’ দেবে।

পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সুসম্পর্ক ছিল বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি উপসাগরীয় দেশ বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে বড় ভূমিকা রাখেন। এসব কারণে ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শত্রুতা, লড়াইয়ের ইতি ঘটাতে অধিক পরিমাণে জোরপূর্বক শক্তি প্রয়োগের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই নেতানিয়াহুকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। বুধবার নাগাদ ইসরাইলকে অধিক সরাসরি অথবা প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানাননি তিনি। অথবা গাজায় জনবহুল স্থানে হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরাইলের বিমান হামলা বন্ধের জরুরি বার্তা দেননি।

কিন্তু তার প্রশাসন এর পরিবর্তে নীরব, জোরালো কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানকে দমন করা হয়েছে। তার প্রশাসন এ বিষয়টি যেভাবে মোকাবিলা করেছে তাতে বাইডেন এবং বেশ কিছু ডেমোক্রেট দলীয় আইনপ্রণেতার মধ্যে বিভক্তি উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। এমন কয়েক ডজন আইন প্রণেতা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

হামাস দাবি করছে যতক্ষণ ইসরাইল বিমান হামলা চালাবে, ততক্ষণ তারাও ইসরাইলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করবে। প্রকাশ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন হামাস নেতারা। ফলে মিশর এবং অন্যরা সঙ্কট সমাধানে যে কাজ শুরু করেছেন তা সফল হতে পারছে না। জবাবে নেতানিয়াহু পরিষ্কার করেছেন যে, হামাস নেতা এবং গাজায় তাদের সরবরাহ টানেলকে টার্গেট করা থেকে অবিলম্বে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা তার নেই। উল্লেখ্য, ২৫ মাইল বাই ৬ মাইল আয়তনের গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘প্রতিদিন আমরা অধিক হারে সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্ষমতা, তাদের সিনিয়র নেতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত বিল্ডিং, অস্ত্রের মজুদাগারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছি’। তার এ বক্তব্যের সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি হোয়াইট হাউজ। তবে বলা হয়েছে, জো বাইডেনের শীর্ষ উপদেষ্টারা ঘন্টায় ঘন্টায় ইসরাইলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন।

বুধবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনিও ব্লিনকেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিরতি বন্ধের পথ সৃষ্টির জন্য উত্তেজনা প্রশমন প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই সাক্ষাৎকারে সেই বার্তাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওদিকে কংগ্রেশনাল ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে ইসরাইলের ওপর যেভাবে চাপ আসছে তাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক আরো জটিল হতে পারে। নিউ ইয়র্কের ডেমোক্রেট দলীয় প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ইসরাইলকে একটি ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে মিনেসোটার প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইলহান ওমর ইসরাইলের বিমান হামালাকে ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মিশিগান সফর করেন জো বাইডেন। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য রাশিদা তৈয়বের সঙ্গে ফিলিস্তিনে লড়াই বিরোধী আলোচনা হয় তার। ওই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন একজন বলেছেন- এ সময় জো বাইডেনকে রাশিদা তৈয়ব বলেন, ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচাতে আরো অনেক কিছু করতে হবে বাইডেন প্রশাসনকে।

নেতানিয়াহু গাজায় হামলা পরিকল্পনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ার পরপরই ইসরাইলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রি বিষয়ক রেজ্যুলুশনের বিরোধিতা করেন ওকাসিও-কর্টেজ, রাশিদা তৈয়ব, উইসকনসিনের মার্ক পোকান। তবে ওই অস্ত্র বিক্রি এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। ওদিকে এই যুদ্ধ, সংঘাত বন্ধে জোরালো এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রতিনিধি পরিষদের ১৩৮ জন ডেমোক্রেট সদস্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর আয়োজন প্রতিনিধি পরিষদে নর্থ ক্যারোলাইনার প্রতিনিধি ডেভিড প্রাইস।

২০১৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে। এতে কমপক্ষে ২১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পক্ষান্তরে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১২ জন।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version