রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করল চেলসি। ২০১২ সালে প্রথম এবং একমাত্র বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল চেলসি।
আর তারপর আট মৌসুম কেটে গেলেও খেলা হয়নি ইউরোপের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্টের ফাইনালে। অন্যদিকে এই সময়ে চারটি ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এবার অপেক্ষার পালা শেষ হল চেলসির। আর তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই বছর পর আবারও অল ইংলিশ ফাইনাল দেখা যাবে।
বুধবার (০৫ মে) রাতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে ২-০ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। রিয়ালের মাঠে ১-১ ড্র করে ফেরা ইংলিশ দলটি দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ অগ্রগামিতায় ফাইনালের টিকেট কাটল।
চেলসির হয়ে ম্যাচের ২৮তম মিনিটে কাই হার্ভাটজের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন টিমো ভার্নার। আর ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ৮৫ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচের অ্যাসিস্ট থেকে দলের লিড দ্বিগুণ করেন মেসন মাউন্ট।
পুরো ম্যাচে ছিল চেলসির একচ্ছত্র আধিপত্য। মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সময় বল দখলে রেখেও প্রায় পুরোটা সময়ই প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় তারা। গোলের উদ্দেশে মোট ১৫টি শট নেয় দলটি, এর পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা ছিল ছন্নছাড়া। রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগ-কোনো জায়গায়ই প্রত্যাশিত ফুটবল খেলতে পারেনি টুর্নামেন্টের রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
কিছুটা ধীর গতির ফুটবলে শুরু ম্যাচের দশম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয় রিয়াল। টনি ক্রুসের দূর থেকে নেওয়া শটটি অবশ্য অনায়াসে নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক এদুয়াঁ মঁদি। পরের মিনিটে পাল্টা-আক্রমণ শানায় চেলসি। দুই মিনিট পর আন্টোনিও রুডিগারের জোরালো শট পাঞ্চ করার পর মাউন্টের গোলমুখে বাড়ানো বল পা দিয়ে রুখে দেন থিবো কোর্তোয়া।
খানিক পর জালে বল পাঠান ভেরনার। তবে অল্প ব্যবধানে অফসাইডে ছিলেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড। ২৬তম মিনিটে করিম বেনজেমার জোরালো শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান মঁদি। পাল্টা আক্রমণে পরের মিনিটে এগিয়ে যায় চেলসি। ভেরনারের সঙ্গে একবার বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে কাই হাভার্টজকে খুঁজে নেন এনগোলো কঁতে। এগিয়ে আসা কোর্তোয়ার ওপর দিয়ে নেওয়া হাভার্টজের চিপ ক্রসবারে বাধা পায়, তবে সঠিক সময়ে গোলমুখে ছুটে গিয়ে হেডে ফাঁকা জালে বল পাঠান ভেরনার।
চোট কাটিয়ে অধিনায়ক ফিরলেও এই গোলে রিয়ালের রক্ষণের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। হাভার্টজের শট নেওয়া থেকে গোল পর্যন্ত কেউই প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি, ভেরনারের হেডের সময় তো তার ধারে কাছে ছিল না কেউ!
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো। তবে হাভার্টজের হেড ক্রসবারে বাধা পায়। পরের ১২ মিনিটে আরও দুটি ভালো সুযোগ পায় তারা; কিন্তু বাড়েনি ব্যবধান। ‘ওয়ান-অন-ওয়ানে’ উড়িয়ে মারেন মাউন্ট। গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন হাভার্টজও; তবে তার শট এগিয়ে গিয়ে রুখে দেন কোর্তোয়া। দিকহারা সতীর্থদের মাঝে কোর্তোয়া ছিলেন স্বরূপে। ৬৬তম মিনিটে কঁতের শটও পা রুখে দেন তিনি।
সুযোগ নষ্টের মিছিলে ১০ মিনিট পর ম্যাচ শেষ করে দিতে পারতো চেলসি; কিন্তু ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের গোলমুখে বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি কেউ। অবশেষে ৮৫তম মিনিটে জয়টা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার মাউন্ট। নাচো ফের্নান্দেসের থেকে বল কেড়ে কঁতে ডি-বক্সে খুঁজে নেন পুলিসিককে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তরুণ উইঙ্গারের কাটব্যাক গোলমুখে পেয়ে দলকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেন মাউন্ট।
২০১১-১২ আসরে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই প্রথম প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে উঠল চেলসি। আজকের এই নজরকাড়া ফুটবল খেলা চেলসির চার মাস আগের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। মৌসুমে দারুণ শুরুর পরও মাঝপথে এসে লিগে আট ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে শীর্ষ থেকে নেমে যায় ৯ নম্বরে। ওই অবস্থায় জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন টুখেল আর পাল্টে যায় চেলসি। নতুন কোচের দেখানো পথে লিগে মাত্র একটিতে হেরেছে তারা, শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনাও এখন উজ্জ্বল। আর এবার উঠল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।
গত মৌসুমে পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি টুখেলের। এবার সুযোগ সেই ভুল শুধরে নেওয়ার। অধরাকে ছোঁয়ার। সামনে অবশ্য কঠিন চ্যালেঞ্জ, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি। আগামী ২৯ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে দুই ইংলিশ ক্লাব।