ঈদকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন পোশাক কিনতে ভিড় বেড়েছে দোকানগুলোতে। মার্কেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই কেনাকাটা করছেন লোকজন। করোনার ভয় উপেক্ষা করে সকাল ১০টার আগেই মার্কেটমুখী সড়কগুলোতে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।
শারীরিক বা নিরাপদ কোনো দূরত্ব মানার অবকাশ যেন নেই ক্রেতাদের মধ্যে। বিক্রেতাদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। হাত ধোয়ার জন্যও নেই কোনো ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেলেও জনতার চাপে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে শহরের চৌরাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, রোড এলাকার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, বাজারের তৈরি পোশাক, দর্জির দোকান, শাড়ি কাপড়, জুতা, স্যান্ডেল ও কসমেটিকসের দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ধাক্কাধাক্কি করেও পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। এদিকে করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে ‘দোকান বন্ধ হয়ে যাবে’ এমন কথা বলে দ্রুত কেনাবেচা করছে বিক্রেতারা।
একটি দোকানে অল্প সময় দাঁড়িয়ে প্রায় কোনো দরদাম ছাড়াই জামা-কাপড় কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। বাজারঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের অধিকাংশেরই কোনো মাস্ক নেই। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নারী ক্রেতাদের চাপ দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি।
সুলতানা বেগম নামের এক ক্রেতা বলেন, দোকানপাট নাকি সব বন্ধ হয়ে যাবে শুনতেছি। এজন্য তাড়াতাড়ি করে কেনাকাটা করতে এসেছি। বাচ্চাদের তো নতুন জামাকাপড় দিতে হবে ঈদে।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই তো আসতাছে। কেউ তো আর মার্কেট করা বাদ দেয় নাই। বাচ্চারা কান্নাকাটি করে।
শহরের চৌরাস্তায় সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা ফাতেমা বেগম জানান, তিনি তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের জন্য জুতা আর নিজের জন্য একটি থ্রিপিস কিনতে এসেছেন। নিজে মাস্ক পরলেও ছেলের মুখে কোন মাস্ক ছিল না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটার কারণ জানতে চাইলে ওই গৃহবধূ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘করোনা নিয়ে আর ভয় দেখাবেন না। যা হওয়ার হবে। এখন একটু কেনা-কাটা করতে দিন।’
মুনমুন নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, ভেবেছিলাম খুব একটা ভিড় হবে না। কিন্তু এবারের চিত্র তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। দোকানগুলোতে ভিড় দেখে ফিরে যাচ্ছি। ঝুঁকি নিতে চাই না।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে ব্যবসা এতো দিন প্রায় বন্ধই ছিল। ঈদকে সামনে রেখে খোলার সুযোগ পাচ্ছি। ক্রেতারাও আসছে অনেক। এত মানুষের জন্য তো স্বাস্থ্যবিধি মানা কষ্টকর। তবে আমরা মাস্ক ব্যবহার করি। ক্রেতাদের মাস্ক পরে আসতে বলি।
অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকানে বেশি ভিড় করতে দেই না। পছন্দ না হলে ক্রেতাদের দ্রুত দোকান ত্যাগ করতে বলি। তাছাড়া এবার সামান্য লাভ হলেই বিক্রি করে দিচ্ছি।
এদিকে মার্কেটগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু। তিনি বলেন, দোকান-পাট ও মার্কেট খোলা হলে সেখানে মানুষ ভিড় করবে বলেই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। যেহেতু আমরা সচেতন নই তাই কোন কিছু দিয়েই মানুষের ভিড় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দোকানে নিরাপদ দূরত্ব মেনে কেনাবেচা করার জন্য দোকানদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।