কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বেড়ানোর কথা বলে আল সানি (৭) নামে এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে মক্তবের হুজুরের বিরুদ্ধে। শিশুটি নিখোঁজের পর পরিবারের মাঝে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং খোঁজাখুজির প্রায় দুই ঘন্টা পর স্বজনদের সহায়তায় অটো রিকশা (সিএনজি) থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এসময় অভিযুক্ত হুজুরের ব্যাগ তল্লাশি করে মাথায় বাঁধার কাল কাপড় ও এর ছোট ছোট টুকরো, ছুরি, দঁড়ি, মেমোরি কার্ড ও একাধিক সিম পাওয়া গেছে। এদিকে অভিযুক্ত হুজুরের বাবা পুলিশকে জানায় তার ছেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় পড়াশুনা করছে।
রবিবার বিকেলে এঘটনায় শিশুটির বাবা ও উপজেলার গিলাচৌকা গ্রামের মো. আ. গনির ছেলে মো. আরিফ মিয়া বাদী হয়ে হুজুরের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত হুজুর হাফেজ আব্দুর রহমান ওরফে রোহান (২৪) গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় বিজয়পাশা গ্রামের মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার ছেলে এবং কলমাকান্দায় বিশ্বরপাশা হামিয়া সুন্নাহ আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রসার শিক্ষক। মাদরাসা বন্ধ থাকায় তিনি গিলাচৌকা জামে মসজিদে শিশুদেরকে মক্তবে পড়ান।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানায় যায়, রবিবার সকাল ৭টার দিকে আল সানি ও তার ফুফাতো ভাই আল মাহি (৮) তারা দুজনে প্রতিদিনের মতো গিলাচৌকা জামে মসজিদে হুজুর রোহানের নিকট মক্তবে পড়তে যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পড়া শেষে ভিকটিম বাড়িতে ফিরতে দেরী দেখে ভিকটিমের বাবা তার ভাগিনা আল মাহিকে (ভিকটিমের ফুফাতো ভাই) জিজ্ঞাসা করে। সে জানায় সানি হুজুরের সাথে কলমাকান্দা গিয়েছে।
ভিকটিমের বাবা বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের জানালে সকলে তাকে খোঁজাখঁজি করতে থাকে এবং পুলিশকে জানায়। ভিকটিমের চাচা জুয়েল মিয়া মোটর সাইকেল নিয়ে খোঁজতে খোঁজতে গ্রাম থেকে কলমাকান্দায় চলে আসে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে জুয়েল মিয়া কলমাকান্দার রেন্ডিতলায় নেত্রকোনামুখী সিএনজিতে বসা অবস্থায় সানিকে দেখতে পায় এবং ভিকটিমের বাবাকে মোবাইলে জানায়। পরে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে ও হুজুরকে আটক করে।
কলমাকান্দা থানার ওসি এটিএম মাহমুদুল হক এ ব্যাপারে প্রতিনিধিকে বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার ও হুজুরকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত হুজুরকে জিজ্ঞাবাদ করা হলে সে জানায় পাঞ্জাবী কেনার জন্য কলমাকান্দায় নিয়ে এসেছে শিশুটিকে। শিশুটি বলে বেড়ানো কথা বলে কলমাকান্দায় নিয়ে এসেছে। আর উদ্ধার করা হয়েছে নেত্রকোনামুখী সিএনজি থেকে। বিষয়টি সন্দেহ বলে হুজুরের বাবাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তার ছেলে ঢাকা যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় পড়াশুনা করছে। সে ওখানে গেল কেমন করে।
ওসি আরও বলেন, চার মাস আগে হামিয়া সুন্নাহ আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন হাফেজ আব্দুর রহমান ওরফে রোহান। তার বিরুদ্ধে ফতোয়া নিয়ে এলাকায় মুরুব্বিদের সাথে দ্বন্ধে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। ব্যাগ তল্লাশির সময় মাথায় বাঁধার কাল কাপড় ও এর ছোট ছোট টুকরো, ছুরি, দঁড়ি, মেমোরি কার্ড ও একাধিক সিম পাওয়া গেছে। সাতদিনের রিমান্ড আবেদনসহ অভিযুক্তকে আগামীকাল (সোমবার) আদালাত পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।