ঘরের মাঠে প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় ত্রাস ছড়ায় পিএসজি। বল দখলের লড়াইয়ে সিটিজেনরা বেশ এগিয়ে থাকলেও স্বাগতিকদের একের পর এক আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠে যায় সফরকারীদের ডিফেন্সে। তবে প্রথমার্ধের সেই ধার আর বিরতির পর ধরে রাখতে পারেনি মৌরিচিও পচিত্তিনোর দল।
শুরুতে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক দলের দুর্বল ডিফেন্সের সুযোগে দুর্দান্ত কামব্যাক করে পিএসজিকে হারিয়ে নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের আসরের ফাইনালের পথে এক পা এগিয়ে রাখলো পেপ গার্দিওলার দল।
বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারের প্রথম লেগে পিএসজিকে তাদের মাঠে ২-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। শুরুতে মার্কুইনহোসের গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেলেও বিরতির পর কেভিন ডি ব্রুইনা ও রিয়াদ মাহরেজ নৈপুন্যে জয় নিয়ে বাড়ি ফিরে সিটিজেনরা। গুরুত্বপূর্ণ দুই অ্যাওয়ে গোলের কল্যাণে ইস্তাম্বুল ফাইনালের পথে অনেকটাই মসৃণ হয়ে গেল ইংলিশ জায়ান্টদের।
পার্ক দেস প্রিন্সেসে ম্যাচে প্রথম সুযোগটি পায় স্বাগতিক পিএসজি। খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই সতীর্থের বাড়ানো বল ডি বক্সে পান নেইমার। তবে ব্রাজিলিয়ান তারকা দুর্বল শট গোলপোষ্টের বাহিরে চলে যায়। পিএসজির আক্রমণ সামলিয়ে সিটিজেনরাও গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে তবে গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের কল্যাণে বেচে যায় স্বাগতিকরা। ত্রয়োদশ মিনিটে গোল পেয়েই বসেছিল পিএসজি।
এবারও সিটির ডি বক্সে নেইমারের নেওয়া শটটি কর্নারের বিনিময়ে ফেরান এডারসন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি সফরকারীদের। দুই মিনিট পরই কর্নার থেকে আনহেল ডি মারিয়ার বাড়ানো বলে হেড গোল করে ফরাসিদের এগিয়ে দেন মার্কুইনহোস। চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ ১২ ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের এটি পঞ্চম গোল, যার মধ্যে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে আছে ৪ গোল। তাছাড়া, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও আতোয়ান গ্রিজম্যানের পর মাত্র তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুই চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে গোল করলেন ২৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার।
গোল খেয়ে যেন হুশ ফিরে পেপ গার্দিওয়ালার দলের। নিজেদের ডিফেন্স সামলে আক্রমণে উঠে সফরকারী দলটিও। তবে এবারও সিটির সব আক্রমণ দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেয় পিএসজি। প্রথমার্ধ পিএসজির ১-০ গোলের লিডে শেষ হয়।
বিরতি থেকে ফিরেই এক অন্য রকম ম্যানচেস্টার সিটির দেখা যায়। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় ছিলো কেভিন ডি ব্রুইনাময়। বেলজিয়ান তারকা মিডফিল্ডারের নেতৃত্বে পিএসজির ডিফেন্সে রীতিমতো আক্রমণের স্টিমরোলার চালায় সিটিজেনরা। ফলও পায় হাতেনাতে।
৬৪তম মিনিটে স্বাগতিকদের হতবাক করে দিয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে সমতায় ফেরান কেভিন ডি ব্রুইনা। বেলজিয়ান তারকা হালকা গতির দূর পাল্লার শট কেইলর নাভাস গতি প্রকৃতি বুঝে উঠার আগেই জাল খুজে নেয়। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল ইতিহাসে ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম গোলও এটি।
গোল খেয়ে যেন খেলায় হারিয়ে যায় পিএসজি। ব্যবধান বাড়ানো দূরে থাক, উলটো সিটির আক্রমণ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় স্বাগতিকদের। ৭ মিনিট পর রিয়াদ মাহরেজের ফ্রি কিকে বল লাফিয়ে ওঠা রক্ষণ প্রাচীরে কিম্পেম্বে ও লেয়ান্দ্রো পারেদেসের মাঝ দিয়ে ঠিকানা খুঁজে পেলে ম্যানচেস্টার সিটির জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষ দিকে পিএসজির কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয় ইদ্রিসা গেয়ির লালকার্ড। মেজাজ হারিয়ে সিটির ইলকাই গিনদোয়ানকে ফাউল করলে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে সেনেগালের এই মিডফিল্ডার। বাকি সময় আর কোন গোল না হলে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যানচেস্টার সিটি। পুরো ম্যাচে নিজের ছাঁয়ায় ছিলেন বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখকে উড়িয়ে দেওয়া পিএসজির তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর বেশকিছু সুযোগ তৈরি করলেও সফল হতে পারেননি দলের সেরা তারকা নেইমার।
ডিসেম্বর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ড্র করার পর এই নিয়ে সবধরনের প্রতিযোগিতায় টানা ১৮ ম্যাচ জয় নিয়ে বাড়ি ফিরল পেপ গার্দিওলার দল। এই সময়ে সিটিজেনরা গোল করে ৪৬টি। অন্যদিকে ২০১১ সালে স্প্যানিশ ক্লাব দেপার্তিভো লা করুনার সঙ্গে হারার পর এবারই প্রথমার্ধে গোল খেয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে হারের মুখ দেখলো পিএসজি।
আগামী রোববার ফিরতি লেগে ম্যানচেস্টারের ঘরের মাঠ ইত্তিহাদে মুখোমুখি হবে দুই দল। চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্নে বিভোর পিএসজিকে ফাইনাল খেলতে হলে সিটিজেনদের মাঠ থেকে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে।