আইপিএলের প্রতিটা ম্যাচই রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে, তবে আজকের ম্যাচটিকে আলাদা ভাবেই মূল্যায়ন করা যেতে পারে। প্রথমে দিল্লি ক্যাপিটালসের টপ অর্ডার ধ্বসের পরও ১৪৭ রানের সংগ্রহ গড়া ও পরে ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও রাজস্থান রয়্যালসের রোমাঞ্চকর জয়।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শেষ ওভারের পঞ্চম বলে সিঙ্গেল না নেওয়ার বিতর্ককে উসকে দিয়ে রাজস্থান রয়্যালসের আজকের জয়ের নায়ক ক্রিস মরিস। তার ১৮ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংসেই দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে রাজস্থান, ডেভিড মিলারের ব্যাট থেকে এসেছে রাজস্থানকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখা ৬২ রানের ইনিংস।
১৪৭ রানের পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে নেমে শুরু থেকেই রাজস্থান রয়্যালসকে চেপে ধরেন দিল্লি ক্যাপিটালসের বোলাররা, চাপের ফল তুলতেও বেশি সময় নেয়নি তারা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই রাজস্থানের দুই ওপেনারকে ফেরান ক্রিস ওকস, ১৩ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে রাজস্থান রয়্যালস।
তবে রাজস্থান রয়্যালস সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় পরের ওভারে, আগের ম্যাচের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিয়ান ও অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনকে ফেরান প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ রান, শিভাম দুবে ও রিয়ান পরাগ যথাক্রমে ২ রান করে আউট হলে ৪২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে রাজস্থান।
একদিকে রান রেটের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে ইনিংসের অর্ধেক না পেরোতেই নেই টপ অর্ডারের ৫ উইকেট। তবে একপাশ আগলে রেখে চেষ্টা করেছেন ডেভিড মিলার, ষষ্ঠ উইকেটে রাহুল তেওয়াতিয়াকে নিয়ে ৫৮ রান যোগ করেন তিনি। ১৭ বলে ১৯ রান করে আউট হন তেওয়াতিয়া।
এবারের আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই ফিফটি তুলে নেন মিলার, ৪৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করে মিলার যখন ফিরে যাচ্ছিলেন রাজস্থান সেই সময়ও জয় থেকে ৪৪ রান দূরে দাঁড়িয়ে। উইকেটে ছিলেন ক্রিস মরিস ও বোলিংয়ের নায়ক জয়দেব উনাদকাট, ক্রিস ওকসকে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন উনাদকাট।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২৭ রানের প্রয়োজন ছিল রাজস্থান রয়্যালসের, কাগিসো রাবাদার করা ১৯ তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দিল্লিকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন ক্রিস মরিস। রাবাদার এই ওভারে আরও একটি ছক্কাসহ ১৫ রান তুলে নিয়ে সমীকরণ ৬ বলে ১২ রানে নামিয়ে আনেন মরিস।
শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন আভিস খান, প্রথম বল থেকে ২ রান নেন মরিস। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৪ বলে ৪ রানে সহজ সমীকরণে ম্যাচটিকে নিয়ে আসেন মরিস, তৃতীয় বলটি ডট হলেও পরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মরিস। ২ বল হাতে রেখেই জয় পায় রাজস্থান, এটি টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম জয়।
১৮ বলে ৪ ছক্কায় ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন ক্রিস মরিস, জয়দেব উনাদকাটের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১১ রান। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন আভিস খান, ২ টি করে উইকেট পেয়েছেন ক্রিস ওকস ও কাগিসো রাবাদা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দিল্লি ক্যাপিটালসেরও, চতুর্থ ওভারের মধ্যেই ১৬ রানে ফিরে যান দুই ওপেনার পৃথ্বী শ ও শেখর ধাওয়ান। দিল্লির ইনিংসে আবারও জোড়া আঘাত হানে রাজস্থানের বোলাররা, ৮ রান করা আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরতে ক্যাচে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন দারুণ বোলিং করা জয়দেব উনাদকাট।
নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, ওভারে ১ রান দিয়ে ফেরান ০ রান করা মারকাস স্টয়নিসকে। ৩৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারালেও ললিত যাদবকে নিয়ে ৫১ রান যোগ করেন অধিনায়ক রিশাভ পান্ত, রান আউটে কাটা পড়ার আগে ৩২ বলে ৯ চারে করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫১ রান।
ললিত যাদবের ২০, টম কারানের ২১, ক্রিস ওকসের ১৫ ও কাগিসো রাবাদার অপরাজিত ৯ রানের কার্যকর ইনিংসে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে ২০ ওভার ৮ উইকেটে ১৪৭ রানের সংগ্রহ পায় দিল্লি ক্যাপিটালস। রাজস্থানের হয়ে ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান জয়দেব উনাদকাট, ২৯ রান খরচায় ২ উইকেট পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৪৭/৮ (রিশাভ পান্ত ৫১, টম কারান ২১, ক্রিস ওকস ১৫, কাগিসো রাবাদা ৯*, জয়দেব উনাদকাট ৩/১৫, মুস্তাফিজুর রহমান ২/২৯, ক্রিস মরিস ১/২৭)।
রাজস্থান রয়্যালস ১৫০/৭, ১৯.৪ ওভার; (ডেভিড মিলার ৬২, ক্রিস মরিস ৩৬*, রাহুল তেওয়াতিয়া ১৯, জয়দেব উনাদকাট ১১*, আভিস খান ৩/৩২, ক্রিস ওকস ২/২২, কাগিসো রাবাদা ২/৩০)।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচঃ জয়দেব উনাদকাট।