কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টা রিপোর্টার) : নেত্রকোনায় কিরিচ দিয়ে আঘাত ও কোমরের বেল্ট দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় কিশোরকে বেদম পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হৃদয় মিয়া ওরফে ব্ল্যাক হৃদয় (২৫) গং এর ওপর। এমন ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার সদর উপজেলায় ঠাকুরাকোনার বাড়ইডহর ব্রিজে উপর।
ভূক্তভোগী কিশোর রনি মিয়াকে (১৭) ডেকে এনে অটো রিকশায় তুলে এক ব্রীজ থেকে আরেক ব্রীজে অভিযুক্তদের একজন ভিডিও ধারন করে এবং এলাকায় ব্ল্যাক হৃদয় নামে পরিচিত হৃদয় মিয়া কোমর থেকে বেল্ট খুলে বেদম পেটায় এবং ভিডিওতে শোনা যায় বেল্ট দিয়ে আরও চারজনকে মারছি। গং-দের অন্যরাও ব্যাপক কিল-ঘুষি ও লাথিও মেরেছে ওই কিশোরকে। পরে অভিযুক্তরা ভিডিও ভাইরাল ও ভিকটিমকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে এখনো।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগীর বাবা বারহাট্টা উপজেলার দশধার গ্রামের আব্দুল কাদির শনিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে নেত্রকোনা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ভূক্তভোগী কিশোর ঠাকুরাকোনায় একটি ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করতো এবং নেত্রকোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলো- জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা গ্রামের হৃদয় মিয়া ওরফে ব্ল্যাক হৃদয়, বাইশধার গ্রামের মো. আনোয়ার মিয়ার ছেলে মো. মিজান মিয়া (১৮), চরপাড়া গ্রামের মো. নয়ন মিয়ার ছেলে লাদেন মিয়া (২০), বারহাট্টা উপজেলার সাধুয়ারকান্দা গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে রানা মিয়া (১৯) ও নওয়াপাড়া গ্রামের সুবল দাসের ছেলে পলাশ দাস (১৮)।
ভূক্তভোগী রনি মিয়া আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ইটভাটায় কাজ করার সময় আলম নামে একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়। আলম আমার মোবাইল দিয়ে একটি মেয়েকে ফোন দিত। আলম ভাটার কাজ ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় এবং অন্য একজনকে বিয়ে করে সেখানে সংসার শুরু করে। ওই মেয়েটি আলমের খোঁজে মাঝে মধ্যে ফোন দিত। বেশ কিছুদিন আগে অভিযুক্তরা আলমকে পেয়ে মারধর করে একপর্যায়ে আলম আমার মোবাইল দিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলত তা তাদেরকে বলে এবং আমার মোবাইল নম্বরটি অভিযুক্তদের দেয়।
গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য দশধার বাজারে যায়। আনুমানিক রাত ৯টার দিকে পাপন শীলের দোকানের সামনে থেকে ডেকে দশধার ব্রিজের দক্ষিণ পাশে আমাকে নিয়ে আসে। চোখমুখ বাঁধার সময় চিৎকার দিলে হৃদয়ের হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে ঘাই দেয়। হাত দিয়ে ফেরাতে গিয়ে বাম হাতের তর্জনী নখ ও হাড় কেটে রক্তাক্ত জখম হয়।
পরে অটো রিকশায় তুলে বাড়ইডহর ব্রিজে এনে একজন ভিডিও ধারণ করে আর হৃদয় কোমড় থেকে বেল্ট খুলে মাথা, মুখ, বুক, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলেপাথারী বাইরাইতে থাকে। বলতে থাকে এই বেল্ট দিয়ে চারজনকে পেটাইছি এবং তার সাথে থাকা অন্যরাও অনেক লাথি ও কিল-ঘুষি মারে। এতে আমার চোখের ভেতর রক্ত জমাট, আঙ্গুল কাটাসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে অসংখ্য নীলা ফোলা জখম রয়েছে।
ভূক্তভোগীর বাবা আব্দুল কাদির বলেন, বাড়িতে ফিরতে দেরি দেখে বাজারে এসে খোঁজাখুজির সময় পাপনকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, লাদেন ও রানা ডাকিয়া ব্রিজের দক্ষিণ দিকে নিয়ে গেছে। সেখানে ছেলেকে না পেয়ে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আনুমানিক রাত ১২টার দিকে বাড়ইডহর ব্রিজে ঘুংরানো অবস্থায় উদ্ধার করি। বাড়িতে এনে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার করায়। পরে চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসায় সুফল না পেয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।
ভূক্তভোগীর বাবার সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তার মধ্যে আছেন। ব্ল্যাক হৃদয় গং-রা নানাভাবে ভয়ভীতি তো দেখাচ্ছে। এমনকি মোবাইলেও হুমকীর বার্তা দিয়েছে একথা জানান তিনি।
এব্যাপারে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ফকরুজ্জামান জুয়েল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তারা জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশা দেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, অবগত হওয়ার পরপরই উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালামকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। তিনি রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং যথাযথ পুলিশি পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।