তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে নুর আলম শেখ (৪৫) দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছেন। বড় ছেলে শিপন (১৫) জন্মের পর থেকেই ধিরে ধিরে হাত পা চিকন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাঁর হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তম শ্রেনির শিপন স্মার্ট মোবাইল না থাকায় অনলাইনে ক্লাশ করতে পারেনি। ফলে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম তার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই স্থানে বসে থাকতে হয়। বসে থাকতেও নিদারুন অমানবিক কষ্ট। জন্মের পর থেকেই তার এমন অমানবিক জীবনযাপন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তার ভীষন কষ্ট। এসময় পরনের কাপড়েই প্রকৃতির কাজ সারতে হয়। অপরের সাহায্য ছাড়া তাঁর জীবনযাত্রা যেন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
নুর আলম শেখের বাড়ি পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ী গ্রামের কানিপাড়ায়। পেশায় একজন দিনমজুর। সরকারের হতদরিদ্রদের তালিকায় নি:স্ব পরিবারটির নাম না থাকায় ১০ টাকা দরে চালও পায় না। নেই প্রতিবন্ধী দুই ছেলের হুইলচেয়ার।
সম্প্রতি নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শারিরীক প্রতিবন্ধী দুই ছেলে ঝুপড়ি ঘরে বসে আছে। ছোট ছেলে রিপন ও বড় ছেলে শিপন। নুর আলম জানান, দুই ছেলেকে সাধ্যমতে চিকিৎসা করিয়েছি। বড় ছেলে শিপন শেখ সপ্তম শ্রেনিতে পড়ে। আগে একটি হুইলচেয়ার ছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে কোলে করে শুধু বিদ্যালয়ে নয়, সব জায়গাতে নিয়ে যেতে হয়।
তিনি আরো জানান, তাদের সংসার চলে অভাব-অনটনে। অনেক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। দুই ছেলেকে হুইলচেয়ার কিনে দেয়ার সার্মথ্য নেই। তাই দুইটি হুইলচেয়ার পেলে কিছুটা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবে তার দুই সন্তান।
প্রতিবন্ধী শিপন শেখ বলেন, ছোট থেকে হাঁটতে পারি না। দাঁড়াতে গেলে মেরুদ- সোঁজা হয় না। পা দুটি চেকন (সরু) হয়ে গেছে। একসময় হুইলচেয়ার করে স্কুলে যেতাম, সপ্তম শ্রেনি পযর্ন্ত পড়েছি। তারপর হুইলচেয়ারটির চাকা নষ্ট হয়ে গেল পাশাপাশি করোনাভাইরাসে স্কুল বন্ধ হল।
দু:খ করে বলেন, যদি শাবিরীকভাবে ভালো হতাম, তবে বাবার সাথে সংসারের কাজ করতাম। এখন সংসারে এক প্রকার বোঝা হয়ে আছি। আমি হাঁটতে পারি না, ছোট ভাইটিও প্রতিবন্ধী। কেউ যদি আমাদের দুইটি হুইলচেয়ার দিত। তবে স্বাভাবিকভাবে একা একা চলাচল করতে পারতাম। পাশাপাশি স্মার্ট মোবাইল ফোন থাকলে অনলাইনে ক্লাশ করতাম। এসএসসি পর্যান্ত লেখাপড়ার করার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে তা স্বপ্নের মত লাগে আমার।
প্রতিবেশী এন্তাস মিয়া বলেন, নুর আলম দিনমজুরী কাজ করে,হুইলচেয়ার কিনে দিবে কি দিয়ে। কেউ যদি তাদের হুইলচেয়ার কিনে দিত। খুবই ভাল হত। তাদের হুইল দরকার। যাতে একটু স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে।
মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, হুইলচেয়ার দেয়ার আমাদের কোন সুযোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে, আমি সুপারিশ করে দেব। ১০ টাকা চালের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, হতদরিদ্রের তালিকা অনেক আগে হয়েছে। নতুন তালিকা করা হলে, তাদের নাম অন্তর্ভূত করা হবে