লোকমান আহমদ সিলেট মানেই ক্রিকেটের উন্মাদনা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টির ১২তম আসরের সিলেট পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে শুক্রবার। আর তার আগেই উত্তেজনায় ফুটছে ক্রীড়াপ্রেমী নগরী। নিজেদের দল সিলেট টাইটান্সকে মাঠে দেখার অপেক্ষায় মুখর সিলেট বাসী। অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর পরপরই ক্রীড়াপ্রেমী সিলেটীদের মধ্যে টিকিট কেনার তীব্র আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তাই বুঝা যায় এবারও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরাতে পুরোপুরি প্রস্তুত দর্শকরা।
আসর শুরুর আগেই ক্রীড়াপ্রেমী এই নগরীতে বিপুল আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে টিকিট বিক্রিতে। রোববার বিকাল ৪টায় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর মাত্র তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় বিসিবির নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, প্রথম দিনের জন্য আর কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। ১৮ হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অতীতের মতো এবার টিকিট সংকট দেখা না দেওয়ার জন্য বিসিবি জানিয়েছে, সব টিকিট একসঙ্গে অনলাইনে ছাড়া হয়নি।
ধাপে ধাপে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে, যাতে ওয়েবসাইট বা অ্যাপে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে এবং কোনো ধরনের সাইবার বা প্রযুক্তিগত সমস্যার সৃষ্টি না হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে দর্শকরা আবারও টিকিট সংগ্রহের সুযোগ পাবেন। প্রথমবারের মতো বিপিএলের সিলেট পর্বে স্টেডিয়ামের কোনো বুথে সরাসরি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। দর্শকদের ভোগান্তি কমানো এবং কালোবাজারি রোধে পুরো টিকিট ব্যবস্থাপনাই অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই পছন্দের আসনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন দর্শকরা।
বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিগ পর্বের ম্যাচে একটি টিকিটেই একই দিনে দুটি ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ব্যয় করেই খেলা দেখার সুযোগ থাকছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড ও গ্রিন গ্যালারির টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। শহীদ আবু সাঈদ স্ট্যান্ডের টিকিট ২৫০ টাকা। ক্লাব হাউজের আপার জোনের টিকিট ৫০০ টাকা এবং ক্লাব হাউজের জিরো ওয়েস্ট জোনের টিকিটের মূল্য ৬০০ টাকা।
গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের আপার ওয়েস্ট, আপার ইস্ট, লোয়ার ওয়েস্ট ও লোয়ার ইস্ট-এই চারটি জোনের প্রতিটি টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। বিপিএলের সিলেট পর্ব সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করতে শনিবার দুপুরে এসএমপি হেডকোয়ার্টার্সে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এসএমপি, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব-৯, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিসিবি, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, আনসার ও ভিডিপি, স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট হোটেল প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
খেলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেটে মোট ১২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সিলেট টাইটান্স, রাজশাহী ওয়ারিয়র্স, নোয়াখালী এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম রয়্যালস, ঢাকা ক্যাপিটাল ও রংপুর রাইডার্স। সিলেট টাইটান্স দলে দেশি তারকার পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটারদের উপস্থিতি দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিপিএলের উদ্বোধনী দিন সিলেটে ছোট পরিসরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ কারণে প্রথম দিনের ম্যাচের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বিকাল ৩টায়, যেখানে মুখোমুখি হবে সিলেট টাইটান্স ও রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক রাহাত শামস দৈনিক একাত্তরের কথাকে জানান, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আমাদের দেশের অন্যতম দারুণ ও আকর্ষণীয় একটি ভেন্যু।
এখানকার দর্শকরা সবসময়ই ক্রীড়াপ্রেমী। অতীতে বুথে টিকিট কাটতে গিয়ে যে ভোগান্তি হতো, তা কমাতে এবং দর্শকরা যেন ঝামেলাবিহীনভাবে খেলা উপভোগ করতে পারেন। এই লক্ষ্যেই এবার পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে আনা হয়েছে। সবুজ পাহাড়ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ভেন্যু হিসেবে পরিচিত। সন্ধ্যার আলোয় পাহাড় ও স্টেডিয়ামের মেলবন্ধন দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দেয়।
টিকিট সংকটের মধ্যেও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা, শক্ত নিরাপত্তা ও তারকাবহুল দল নিয়ে বিপিএলের ১২তম আসরের সিলেট পর্ব ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর উৎসবে পরিণত হতে যাচ্ছে।

