নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আগস্ট মাসের বরাদ্দকৃত ২৮০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধানী দল কেন্দুয়ায় এসে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেন।
দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই করা হয়। তদন্তের স্বার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাগজপত্র দুদক কর্মকর্তারা জব্দ করে নিয়ে যান।
জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নয় হাজার ৩৯৯ জন হতদরিদ্র সুবিধাভোগীর মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের জন্য মোট ২৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, ওই মাসে কোনো সুবিধাভোগীই চাল পাননি। বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই দুদক অভিযান শুরু করে।
এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (খাদ্য কর্মকর্তা) কাওসার আহমেদ এবং সংশ্লিষ্ট ১৩ ইউনিয়নের প্রায় সব ডিলারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, আগস্ট মাসের চাল উত্তোলন দেখানো হলেও বাস্তবে তা বিতরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, ডিলাররা ২৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চাল উত্তোলন করেছেন। সুবিধাভোগীরা নির্ধারিত সময়ে না পেলেও পরের মাসে চাল পেয়েছেন। তাঁর কাছে সংশ্লিষ্ট রেকর্ড রয়েছে এবং তা দুদক কর্মকর্তাদের দেখানো হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার জানান, তাঁরা আগস্ট মাসের চালের বরাদ্দ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তাঁদের মাধ্যমে বিতরণ না করে কীভাবে চাল বিক্রি হলো- তা নিয়েই তাঁরা বিস্মিত। ডিলাররা অভিযোগ করেন, ডিলারশিপ নবায়নের নামে খাদ্য কর্মকর্তা তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।
এক ডিলার বলেন, ‘কথা বললেই বিপদে পড়তে হয়। আমাদের অজান্তে চাল বিক্রি করে দেওয়া বড় ধরনের অনিয়ম।’
অভিযানকালে দুদক কর্মকর্তারা নওপাড়া ডিলার আউটলেট পরিদর্শন করেন। সেখানে ডিলার, সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। জানা গেছে, আগস্ট মাসে কেন্দুয়ার ১৩ ইউনিয়নের ২৬ জন ডিলারের অনুকূলে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ সুবিধাভোগী চাল না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় একাধিক সুবিধাভোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে নভেম্বর মাসে ডিলাররা আগস্ট ও নভেম্বর মাসের চাল একসঙ্গে বিতরণ করেন।
দুদকের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। আজ সেবাগ্রহীতা ও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। কিছু নথিপত্র অধিকতর তদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খাদ্য কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ আগস্ট মাসের চাল বিতরণে ‘কিছুটা অনিয়ম’ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কীভাবে এ অনিয়ম হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ট্যাগ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ হওয়ার কথা। বিষয়টি তদন্তাধীন।’


