রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, আবেগ আর ভবিষ্যৎ নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়ে। সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। শহরের বিজয় চত্বর থেকে উপজেলা চত্বর—সবখানে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের উচ্ছ্বাস ও শহীদদের প্রতি নীরব শ্রদ্ধা।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এক মিনিট নীরবতা পালন ও বিশেষ দোয়া-মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শান্তির পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় দিবসের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান। এ সময় উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা মাঠে বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজে শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের।
বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, এটি আজও রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার নৈতিক দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার বিরোধী অপশক্তি, ইতিহাস বিকৃতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা আরও বলেন, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী মানসিকতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানো এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করাই সময়ের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গের মাঝে বিশেষ খাবার, কম্বল ও সম্মানী ভাতা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি উপজেলা হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেশাত্মবোধক গান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ডিমলা পরিণত হয় বিজয়ের আলোয় আলোকিত এক জনপদে।


