নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় দুই দশকের বিরতির পর অনুষ্ঠিত হওয়া ‘নতুন কুড়ি’ ২০২৫ এ মঞ্চ মাতিয়েছে দুই বোন আরিশা দানীন মাহা ও যাফিরাহ দানীন মুনম। তাঁদের মধ্যে আরিশা দানীন মাহা বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে ‘ক’ গ্রুপে আবৃত্তিতে প্রথম ও রবীন্দ্র সঙ্গীতে দ্বিতীয় হয়। আর ছোট বোন যাফিরাহ দানীন মুনম কৌতুক প্রতিযোগিতায় চতুর্থ।
আরিশা নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে আর যাফিরাহ নেত্রকোনা ওয়েসিস বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে কেজি শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তাদের মা–বাবা দুজনই সরকারি চাকুরে। মা মুনমুন জাহান লিজা নেত্রকোনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। আর বাবা মো. মোশারফ হোসেন চিকিৎসক। মায়ের কাছেই মাহার আবৃত্তির হাতেখড়ি। সে ছোটবেলা থেকেই গান ও আবৃত্তি পছন্দ করে। সে ভবিষ্যতে আরও মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিল্পচর্চা করে দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে চায়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর আয়োজনে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণমূলক জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা নতুন কুঁড়ির ফলাফল গত ১১ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্ব, সেরা দশ, সেরা পাঁচ এবং ফাইনাল রাউন্ড শেষে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। প্রধান উপদেষ্টা নিজ কার্যালয়ে ডেকে ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরা দুই বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ‘ক’ ও ‘খ’ বিভাগের প্রতি বিষয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মোট ৭৩ জন শিশুশিল্পী পুরস্কৃত হয়। অনুষ্ঠানে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে ২ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ১ লাখ টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হয়।
আরিশা দানীন মাহা বলে, মায়ের কাছেই আমার আবৃত্তিতে হাতেখড়ি আমার। নতুন কুঁড়িতে অংশ নেয়ার মুহূর্তটি আমার খুবই ভালো লেগেছিল। নতুন কুঁড়ির মতো একটা বিখ্যাত প্রতিযোগিতায় আমি অংশগ্রহণ করতে পেরে এবং পুরস্কার লাভ করে অত্যান্ত গর্ব অনুভব করছি। আমার কাছে প্রতিটি রাউন্ডই অনেক কঠিন ছিল। সঠিক চর্চা থাকার কারণে আমার কাছে প্রতিটি ধাপ সহজ হয়ে গেছে। আমি প্রতিটি ধাপেই ভয়হীন পারফরম্যান্স করেছি। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার বাবা-মা ছাড়াও শিক্ষকদের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।’
আরিশা ও যাফিরাহ মা মুনমুন জাহান বলেন, ‘আমার দুই মেয়েসহ নেত্রকোনার আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী নতুন কুঁড়িতে অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতায় স্থান করে নিয়েছে সেজন্য আনন্দ পাচ্ছি। নতুন কুঁড়ির এই অনুষ্ঠান শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়- এটি বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মেধা, মনন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের অন্যতম মঞ্চ। এ মঞ্চ থেকে দেশের অনেক খ্যাতনামা শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উঠে এসেছেন। দেশ বরেণ্য শিল্পীদের বিচার কার্যক্রম এবং নির্দেশনা প্রতিযোগীদের অনেক বেশি শাণিত করেছে। শিশু-কিশোররা যেন তাদের শিল্পচর্চা অব্যাহত রাখে। তারা যেন সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে মানবিক মানুষ হয়ে উঠে।’
এ ছাড়া নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া সাইয়ারা ত্বাহা ‘খ’ গ্রুপে দ্বিতীয় এবং গল্প বলায় নবম হয়েছে। নেত্রকোনা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান মহিমা ‘খ’ গ্রুপে হাম-নাদে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। বারহাট্টা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অধরা দাস অথৈ আধুনিক গানে ষষ্ঠ ও নজরুল গীতিতে সপ্তম স্থান লাভ করে। কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসকিয়া ফেরদৌসী প্রযুক্তি রবীন্দ্রসঙ্গীতে পঞ্চম হয়।
