নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া স্মরণ করছে ৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের কবল থেকে মুক্ত হয় কেন্দুয়া থানা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং সর্বস্তরের মানুষ এ দিনটিকে উপজেলাটির মুক্তির ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে প্রতি বছর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন।
দীর্ঘ নয় মাসের প্রতিরোধ- মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে কেন্দুয়ায় ছিল একের পর এক আক্রমণ ও প্রতিরোধের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে আসে, তখন মুক্তিযোদ্ধারা সমন্বিত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দুয়া থানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন।
৭ ডিসেম্বর সকালে গেরিলা কৌশলে আক্রমণ শুরু হলে পাক সেনারা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। ফলে কেন্দুয়া থানা আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
কেন্দুয়ার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন- হাদিস উদ্দিন চৌধুরী, এম. জুবেদ আলী, আবদুল কুদ্দুছ তাং, আব্দুল আউয়াল আকন্দ, নাজিম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিনসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।
তাঁদের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবসমাজ কয়েক মাস ধরে প্রতিরোধশক্তি গড়ে তোলে। কাইটাল-বাড়রী, শ্যামগঞ্জ, পূর্বধলা ও রামপুর এলাকায় ধারাবাহিক আক্রমণে পাকবাহিনীর অবস্থান ক্রমে দুর্বল হতে থাকে।
২২ সেপ্টেম্বর কাইটাল- বাড়রীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সফল অ্যামবুশে ৮১ জন পাক সেনা নিহত হয়। যা ছিল নেত্রকোনা অঞ্চলের অন্যতম বড় বিজয়। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা যখন থানা প্রাঙ্গণে লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন, তখন হাজার মানুষের স্লোগানে মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কেন্দুয়াজুড়ে।
হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ সকালে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সকাল ১১টায় র্যালির মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাড়ে ১১টায় কেন্দুয়া চিরাং রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, কমান্ডার, কেন্দুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাতুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাঈম উল ইসলাম চৌধুরী।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন সভাপতি বজলুর রহমান, নেত্রকোনা-৩ আসনে জমিয়াতে ইসলাম মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা হারুনুর রশিদ, কেন্দুয়া জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সালাহউদ্দিন সালাম, কেন্দুয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সেলিম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন খোকন, পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন খান, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষ।
কেন্দুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার নুরুল ইসলাম বলেন, কেন্দুয়ার মুক্তির এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের মর্যাদা ও স্বাধীনতার ভিত্তি।”
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কেন্দুয়ার হানাদারমুক্ত দিবস নতুন প্রজন্মকে জানায়-স্বাধীনতা কোনো দিবসের নাম নয়, এটি ত্যাগ আর বীরত্বের রক্তস্নাত ইতিহাস।


