রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা ব্যারাজের উজানে মূল স্রোতধারা খননের প্রস্তুতি ঘিরে দফায় দফায় উত্তেজনা জমছে। কয়েকদিন আগে খননযন্ত্র ও প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বুড়ি তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পৌঁছাতেই কুটিরডাঙ্গা, রামডাঙ্গা ও আশপাশের পাঁচ মৌজার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ—এই খনন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শত শত পরিবার উচ্ছেদের মুখে পড়বে, হারাবে বসতভিটা, আবাদি জমি ও জীবিকা। সেই আশঙ্কা থেকেই শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর ডিমলা, ডোমার ও জলঢাকা এই তিন উপজেলার প্রায় সারে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ বুড়ি তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন উজান কুটিরডাঙ্গা এলাকায় এক বিশাল মশাল মিছিল বের করেন। কিশোর, নারী, বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষ এতে অংশ নেয়, যেন পুরো জনপদ অন্ধকারের মাঝে জ্বলন্ত প্রতিবাদের আলোয় রূপ নেয়।
মশাল মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, বুড়ি তিস্তা ব্যারাজ এলাকার প্রায় ১ হাজার ২১৭ একর জমি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ বহুদিন ধরেই করে আসছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের আশঙ্কা, খনন প্রকল্প চালু হলে অন্তত ৭৫০টি পরিবার এক ধাক্কায় সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসবে।
সমাবেশে বক্তব্যরা বলেন—
“বুড়ি তিস্তা খনন মানে আমাদের ঘরবাড়ি, ফসল, জীবিকা সব শেষ। নদী খননের নামে আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হবে। নিজের পরিবার বাঁচাতে আমরা মাঠে নেমেছি। এই মশাল মিছিল সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কাছে বার্তা—আমরা কোনোভাবেই এই খনন প্রকল্প চাই না। অবিলম্বে প্রকল্প বাতিল করুন।” ‘আমরা গৃহহীন হতে রাজি নই’—সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন।
আরেক বাসিন্দা কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন—
“আমরা প্রজন্ম ধরে এই জমিতে আছি। একদিনে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হলে আমরা কোথায় যাব? কেউ আমাদের কথা শোনে না, তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামলাম।”
সরেজমিনে এলাকাবাসী জানান, বুধবার থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কোথাও কোথাও রাতেই পাহারা বসানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নদী খননের সরঞ্জাম বহনকারী গাড়ি এলেই স্থানীয়রা বাধা দিচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
বুড়ি তিস্তা খনন প্রকল্পের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিবেদনের শেষ অবধি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।


