নিজস্ব প্রতিবেদক: গত সাতবছর ধরে নবজাতককে গাছের চারা দিয়ে পৃথিবীতে আগমনের জন্য স্বাগত জানাচ্ছে একদল সবুজ মনের কিশোরী। যে শিশুদের যাত্রা শুরু হয়েছে হয়ে জিরো কার্বন দিয়ে। নেত্রকোনায় সবুজ পৃথিবী গড়তে নবজাতক জন্ম নিলেই বাড়িতে গিয়ে হাজির হন এই প্রকৃতিপ্রেমি কিশোরীরা। নবজাতককে গাছের চারা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে গ্রামের একদল কিশোরী।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামের ১৫ জন কিশোরী ‘অগ্রযাত্রা কিশোরী’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে ১২ সাত বছর আগে। কিশোরীরা সকলেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
কাজের ধারাবাহিকতায় বুধবার (১২ নভেম্বর) ফচিকা গ্রামের পাঁচজন নবজাত ও সাতজন গর্ভবতী নারীর জন্য একত্রে শুভেচ্ছা জানানো ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের জন্য এক ব্যতিক্রমি কর্মসূচীর আয়োজন করে কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা বিনতে রফিক, বিশেষ অতিথি ছিলেন কাইলাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হক, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান ও গ্রামের নারী পুরুষ।
ফচিকা গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় নতুন শিশু জন্ম নিলেই একটি ফলজ, একটি ঔষধি ও একটি বনজ গাছের চারা নিয়ে হাজির হয় শিশুর মায়ের কাছে। শিশুকে স্বাগত জানায় এই পৃথিবীতে। তাদের জীবনের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ ও জিরো কার্বন করার জন্য এই উদ্যোগ। আর এমনটি দেখে খুশি হন নবজাতকের পরিবারসহ গ্রামের মানুষেরাও। শুধু গাছের চারা নিয়েই শুভেচ্ছা জানায় তাই নয়।
গ্রামের যে কোন পরিবারে কোন নারী গর্ভবতী হলে কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে ওই নারীকে মাসের পুষ্টিকর খাবার দিয়ে আসছে এই উদ্যোগী কিশোরীরা। নিজেরা এসব খাবার সংগ্রহ করে এবং বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়তায় ৩০টি ডিম, কলা, পেয়ারা, লেবু, অচাষকৃত শাক, ইত্যাদি কিনে দিচ্ছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত গর্ভবতী মায়ের ওজন মাপা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরিমাপ, নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য চেকআপের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
সংগঠনের সভাপ্রধান বিথী আকতার বলেন, “গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মায়েদেরকে বাড়ির অনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। একটি সবুজ সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়তে মায়ের গর্ভ থেকেই শিশুর যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। যে পুষ্টি নানাজাতের সবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল থেকে আসে। এছাড়াও এসব নবজাতক সন্তানের বড় হলে তাদের ভরণপোষণ, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে প্রসূতি মায়েদের জন্য দেওয়া এসব গাছ একদিন তাদের সম্পদ হয়ে উঠবে।”
প্রধান অতিথি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আসমা বিনতে রফিক বলেন, “অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সংগঠনের সদস্যরা ছোট হলেও তাদের গৃহীত উদ্যোগগুলোকে ছোট করে দেখা বা অবহেলা করার কোন উপায় নেই। তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবুজ পৃথিবী গড়ার যে অঙ্গীকার তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে। আসুন আমরা এই সাহসী কিশোরীদের স্যালুট জানাই।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের বিথী আকতার ও বারসিক কর্মকর্তা খাদিজা আকতার লিটা।
