নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় গত দশ মাসে ৩৪টি অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। থানা পুলিশের রেকর্ড বলছে- এগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে পারিবারিক অশান্তি, অভিমান ও মানসিক সংকটের কারণে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গলায় ফাঁস নিয়ে মৃত্যু ১৫ জন, বিষপানে চার জন, পানিতে ডুবে আট জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছয় জন এবং বজ্রপাতে মৃত্যু একজন।
এদের মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও নারী ১৪ জন। গড়ে প্রতি মাসে তিনজনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এই মৃত্যুগুলোর বেশির ভাগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পারিবারিক কলহ, প্রেমের টানাপোড়েন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মানসিক অবসাদ ও একাকীত্ব। এছাড়া সহজলভ্য বিষাক্ত দ্রব্য ও কীটনাশকও দ্রুত মৃত্যুর পথ তৈরি করছে।
স্থানীয় সাংবাদিক কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, অপমৃত্যুর ঘটনাগুলো এখন ভয়াবহ হারে বাড়ছে। সমাজে কেউ কারও পাশে দাঁড়ায় না এটাই মূল কারণ। পারিবারিক ও সামাজিক সহমর্মিতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে এই মৃত্যু থামবে না।
কেন্দুয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল কাদির নয়ন বলেন, অপমৃত্যু রোধে প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং পারিবারিক সচেতনতা। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত সেমিনার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাড়তি প্রভাব ও পারিবারিক সময়ের অভাবও তরুণ প্রজন্মকে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, অপমৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে উঠোন বৈঠক ও সচেতনতামূলক সভা করছি। শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি পারিবারিক দায়িত্ববোধ জোরদার করতে পারলেই এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।
স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, অপমৃত্যু কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়- এটি সামাজিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত। পারিবারিক ভালোবাসা, সংলাপ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার ঘটাতে পারলেই মৃত্যুর এই অন্ধ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দুয়ায় ঘটে যাওয়া এই ৩৪টি অপমৃত্যু দেশের সামগ্রিক বাস্তবতার প্রতিফলন। এখনই সময় সমাজের সব স্তরে “বাঁচতে শেখার” ও “পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর” আন্দোলন গড়ে তোলার।


