সিলেট: শহরের পাঠানটুলায় অবস্থিত শতবর্ষী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্থাপনার মালিকপক্ষ এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শহরের ইতিহাসবাহী এই ভবনটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র আক্ষেপ ও ক্ষোভ। শ্রমিকরা হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি ভাঙার কাজ করছেন। ইতোমধ্যে দরজা-জানালা খুলে ফেলা হয়েছে, চলছে ছাদ ভাঙার কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, ছাদে ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল।
এই বাড়িটির নির্মাতা ছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নামানুসারেই বাড়িটি পরিচিতি পায় ‘মিনিস্টার বাড়ি’ হিসেবে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাড়িটির বয়স প্রায় একশ বছর। তবে নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, কিছুদিন আগে বাড়ির সামনে ‘বিক্রয়ের জন্য’ সাইনবোর্ড ঝুললেও আদতে এটি বিক্রি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। মালিকপক্ষ বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-ধরা, সিলেট’-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার সংখ্যা হাতেগোনা। এ ধরনের একটি স্থাপনা ভেঙে ফেলার ঘটনা সত্যিই হতাশাজনক। এটি শুধু একটি বাড়ি নয়, আমাদের শহরের ইতিহাস ও স্থাপত্যের সাক্ষ্যবাহী একটি নিদর্শন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
একজন লিখেছেন, শতবর্ষী এই বাড়িটি শুধু ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ভেঙে ফেলা অযৌক্তিক। এমন স্থাপত্য এখন আর তৈরি করা সম্ভব নয়। আরেকজন মন্তব্য করেন, এই বাড়িতে এক সময় পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এটি শুধু ইতিহাস নয়, এক ধরনের ঐতিহ্যও বটে। উল্লেখ্য, মিনিস্টার বাড়ির নির্মাতা আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের স্ত্রী এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের দাদি।