মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের একটি সাধারণ বাসার বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, ভিতরে চলছে কোটি টাকার জাল টাকা ও নকল অস্ত্রের বাণিজ্য। এই বাড়িতেই কুলাউড়ার মোক্তাদির আলী ওরফে রিপন (৩৪) ভিডিও কলে দেখাতেন চকচকে বিদেশি পিস্তল, আসল সদৃশ গুলি আর ডলারের বান্ডিল। ক্রেতারা বিশ্বাস করতেন এসব আসল। তারপর টাকা পাঠাতেন বিকাশ বা ব্যাংক ট্রান্সফারে।
কিন্তু তাদের হাতে পৌঁছাতো কাগজে মোড়ানো জাল টাকা বা নকল অস্ত্র, আর অনেক সময় শুন্য কিছুই না। মঙ্গলবার (১৪ই অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে র্যাব-৯, সিপিসি-২ মৌলভীবাজার ও সদর কোম্পানি সিলেটের যৌথ অভিযানে কুলাউড়ার সম্মান এলাকায় তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়। বাড়ির ওয়ারড্রব থেকে উদ্ধার হয় প্রায় এক কোটি টাকার জাল দেশি-বিদেশি নোট, পাঁচটি নকল বিদেশি পিস্তল এবং নকল আট রাউন্ড গুলি। র্যাব-৯ এর তথ্য অনুযায়ী, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই মোক্তাদির অনলাইনে একাধিক ভুয়া প্রোফাইল ও পেইজ খুলে ব্যবসা জমিয়ে ফেলেছিলেন।
ভিডিও কলে জাল অস্ত্র ও টাকা দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন ছিল তার কৌশল। কখনও কুরিয়ারে পাঠাতেন নকল মালামাল, আবার কখনও পাঠানোর কথা বলে পাঠাতেন ভুয়া ডেলিভারি স্লিপ। এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। র্যাবের তদন্তে জানা গেছে, তিনি অনলাইন চ্যাট, টেলিগ্রাম ও ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহার করতেন ক্রেতা খুঁজতে। তার ফোনে পাওয়া গেছে বিদেশি অস্ত্র বিক্রির ভুয়া বিজ্ঞাপন ও ট্রান্সফার রেকর্ডের প্রমাণ। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোক্তাদির আলী স্বীকার করেন, গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন সরবরাহকারীর কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জাল টাকা ও নকল অস্ত্র কিনে অনলাইনে বিক্রি করতেন তিনি।
ভিডিও কলে ক্রেতাদের আসল অস্ত্র ও টাকার মতো দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতেন। পরে অনেক ক্ষেত্রে নকল কুরিয়ার স্লিপ দেখিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে প্রতারণা করতেন, আবার কখনও কুরিয়ারে নকল অস্ত্র ও জাল টাকা পাঠাতেন। র্যাবের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে. এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, মোক্তাদির মূলত অনলাইনে নকল অস্ত্র ও জাল টাকা বিক্রি করে আসছিল। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরবরাহকারী চক্রকে ধরতে অভিযান চলছে। জুলাইয় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন থানায় লুট হওয়া প্রায় ১৫০০টি অস্ত্র ও দেড় লাখেরও বেশি গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে সিলেট বিভাগে নকল অস্ত্রের কারবার নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে।
এসব নকল অস্ত্র সহজেই অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার বা ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো সম্ভব, যা নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে। মোক্তাদির একা নন। তার পেছনে কাজ করছে একটি সংগঠিত অনলাইন চক্র, যারা রাজধানী ও সীমান্তবর্তী জেলা থেকে এসব নকল সামগ্রী সরবরাহ করত।
এই চক্রটি অনলাইন প্রতারণার পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার জাল সংস্করণ তৈরি করত। গ্রেপ্তারকৃত মোক্তাদিরের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জাল টাকা প্রস্তুতকারী ও অস্ত্র সরবরাহকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, অনলাইন জাল টাকা ও অস্ত্র বাণিজ্যের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।