সিলেট প্রতিনিধি :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ নয় বছর পর ফিরে গেলেন সেই পথে, যেদিক দিয়ে ২০১৫ সালে তাকে গুম করে ভারতে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার সকালে ঢাকার একটি ফ্লাইটে সিলেট পৌঁছে তিনি সরাসরি যান তামাবিল সীমান্তে।
সেখানে সরকারের গঠিত গুম-খুন তদন্ত কমিশনের উদ্যোগে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নেন তিনি। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হন তৎকালীন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। ৬৩ দিন পর, একই বছরের ১১ মে, ভারতের শিলং শহরে তার সন্ধান মেলে। সেখান থেকে দীর্ঘ প্রায় নয় বছর আইনি জটিলতার কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি।
তামাবিল সীমান্ত পরিদর্শনের সময় সালাহউদ্দিন বলেন, যেদিন আমাকে চোখ বেঁধে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন বুঝতে পারিনি গন্তব্য কোথায়। ভেবেছিলাম হয়তো ক্রসফায়ারের জন্য নেওয়া হচ্ছে। আজ বুঝি, সম্ভবত এই পথ ধরেই আমাকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, শিলংয়ে চোখ খুলে বুঝলাম, বেঁচে গেছি। কিন্তু এরপর আমাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন মনে হয়েছিল, হয়তো সারা জীবন ওখানেই কাটাতে হবে।
মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে এমনভাবে গুম করে রাখাও এক ধরনের মৃত্যু। এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক গুমের ঘটনা ব্যক্তি ও পরিবার- উভয়ের জীবনেই গভীর ক্ষত তৈরি করে। তথ্যচিত্রটির শুটিংয়ে অংশ নিতে সালাহউদ্দিন আহমেদকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদী, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা এমএ মালিক ও কামরুল হাসান চৌধুরী শাহিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনা তদন্তে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এ কমিশনের আওতায় পড়বে। দেশে ফেরার পর, গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। সেখানে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করেন গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে।