দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

গাইবান্ধা প্রতিনিধি :

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মায়া আক্তার দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে অনুপস্থিত । শ্রেণী শিক্ষক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঐ শিক্ষার্থীর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে গত ৬ দিন আগেই তার বিয়ে হয়েছে। কি অবাক হচ্ছেন? ঘটনাটি নিছক কোন গল্প নয় শিশু বিয়ের মতো এমন এক ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাল্য বিয়েতে ঐ শিশুর দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও তার দাদি জোরপূর্বক নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টসে কর্মরত এক যুবকের সাথে বিয়ে দেয় ।

গত ৫ বছরে শুধু এই এক ইউনিয়নে মায়া আক্তারের মতো এমন শত শিশু – কিশোরীর বাল্য বিয়ে হয়েছে । স্থানীয় তিনটি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে মোট ভর্তির ৪৮ শতাংশ ছাত্রী দশম শ্রেণীতে ওঠার আগেই পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের কারনে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছে । রহমতপুর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৭৮ জন । এদের মধ্যে ২০২৫ সালে দশম শ্রেনী পর্যন্ত টিকে আছে মাত্র ৩৫ জন ।

বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেক বান্ধবীর বিয়ে সপ্তম ,অষ্টম,নবম শ্রেণিতে বিয়ে হয়ে গেছে তাই তারা আর পড়াশোনা করে না ।  বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র বর্মন জানান, এলাকায় বাল্য বিয়ের সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয় প্রধান হিসেবে অভিভাবক সমাবেশ ও শ্রেণীকক্ষে মাঝে মাঝে আমরা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করি এরপরও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মি. বাদল ২০২৩ সালের একটি ঘটনা স্মরণ করে বলেন, অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে তার পরিবার জোর পূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ঐ ছাত্রী আমার শরণাপন্ন হয় আমি পরবর্তীতে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করে দেই ।  অনুসন্ধানে দেখা যায়,বাল্য বিয়ে গুলো অনুষ্ঠিত হয় খুব গোপনীয়তার সাথে বিশেষ করে নিজ বাড়িতে না হয়ে নিকটাত্মীয়র বাড়িতে। এসব বিয়েতে রেজিস্ট্রি হলেও সেখানে দাখিল করা হয় ভুয়া জন্ম সনদ। মূলত বিবাহ রেজিস্ট্রারদের সামান্য কিছু টাকা দিলেই খুব সহজেই অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে গভীর রাতে বাল্য বিয়ে সংগঠিত হয় ।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিবাহ রেজিস্ট্রারের (কাজী) বলেন , বাল্য বিয়ের ঘটনায় মেয়ের নকল জন্ম সনদ তৈরি করা হয় এবং রেজিস্ট্রারের সাথে সেই কাগজ জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়না জন্য এসব জালিয়াতি ধরা পড়ে না। আর আমাদের কাজ হলো বিয়ে রেজিস্ট্রার করা মেয়ে পক্ষ যে কাগজ দেয় আমরা সেই অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করি ।

গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছরে জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের একটি বড় অংশ এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না যাদের অধিকাংশই বাল্য বিয়ের স্বীকার হয়েছে ।বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য, সামাজিক কুসংস্কার, অভিভাবকের ভয়—এসবই অকালবিবাহের মূল কারণ। অনেক অভিভাবক মনে করেন, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিলে সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় এবং সংসারের বোঝা কমে। এদিকে বাল্য বিয়ের ফলে কিশোরী বয়সে বিয়ে হওয়ায় তাদের অনেকেই গর্ভধারণের পর শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন।

নারী ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবু সাইদ ফেরদৌস এর মতে, অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দিলে প্রসবকালীন জটিলতা, রক্তস্বল্পতা, এমনকি মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া মানসিক চাপ, নির্যাতন ও সংসার ভাঙনের আশঙ্কাও বাড়ে। গাইবান্ধা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আফরোজা বেগম মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে আইনের পাশাপাশি শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।“বিদ্যালয়ে কিশোরীদের টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের নিরাপত্তা, বৃত্তি ও সামাজিক সচেতনতা একসাথে বাড়াতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version