দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী গায়ক ও সুরকার শচীন দেব বর্মণের কুমিল্লার জন্মভিটা সংরক্ষণ ও সেখানে পূর্ণাঙ্গ একটি সংগীত জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি শচীনের ভিটেবাড়ি পরিদর্শন ও সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে।

সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর চর্থায় অবস্থিত শচীনের ভিটেবাড়ি পরিদর্শন করেন জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা ও সংগীত জাদুঘর বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মো. সেরাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল।

শচীনের ভিটেবাড়ি পরিদর্শনের পর মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী শচীন দেব বর্মণ এবং নবীনগরের শাস্ত্রীয় সংগীতের আচার্য সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পৈত্রিক বাড়ি দুটিকে ভবিষ্যতে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই করবে।

তিনি বলেন, আমরা বাড়ি দুটি পরিদর্শন করেছি এবং এখানে জাদুঘর করার পর্যাপ্ত যৌক্তিকতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আশা করি, শিগগিরই এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে এবং দুটি ঐতিহাসিক ভিটেবাড়ি দেশের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

তিনি জানান, ভিটেবাড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ সংগীত জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে শচীনের জীবন ও কর্মের দলিল চিত্র, সংগীত আর্কাইভ ও গবেষণা কক্ষ, মুক্তমঞ্চ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানস্থল ও সংগীত শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

কুমিল্লা নগরীর চর্থায় অবস্থিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী গায়ক ও সুরকার শচীন দেব বর্মণের জন্মভিটা। ছবি: বাসস

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার হাছিবুর রহমান পরাগ বলেন, শচীন দেব বর্মণের ভিটে কেবল কুমিল্লার নয়, দেশেরও গৌরব। এখানে জাদুঘর হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে।

ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ২০১২ সাল থেকে শচীন কর্তার ভিটেবাড়ি সংরক্ষণের জন্য কুমিল্লার সাংস্কৃতিক কর্মীরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পর্যায়ে বাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং প্রতিবছর শচীন কর্তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। যদি এখানে সংগীত জাদুঘর স্থাপন করা হয়, দেশি-বিদেশি পর্যটকরা শচীন দেব বর্মণ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং কুমিল্লা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নতুন করে জায়গা করে নেবে।

সংগীত গবেষকরা বলছেন, শচীনের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য এ ভিটেবাড়ি অমূল্য কেন্দ্র হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা ও শিক্ষার্থীরা সরাসরি দলিল, ছবি, নোটেশন এবং অডিও-ভিডিও আর্কাইভ ব্যবহার করতে পারবেন। এতে সংস্কৃতির ইতিহাস চর্চা সমৃদ্ধ হবে।

সর্বোপরি, শচীন দেব বর্মণ কেবল একজন সংগীতশিল্পী নন। তিনি কুমিল্লা তথা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। তাঁর জন্মভিটা সংরক্ষণ তাই স্থানীয় নয়, জাতীয় দায়িত্ব। সরকারের সদ্য গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কুমিল্লার এই ভিটেবাড়ি হয়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের জন্য সংগীতচর্চার প্রেরণা স্থল।

১৯০৫ সালের ১ অক্টোবর (মতভেদে ১৯০৬) কুমিল্লার চর্থায় জন্ম নেন শচীন দেববর্মণ। তাঁর পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মণ ছিলেন ত্রিপুরা রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবার কুমিল্লায় চলে আসে এবং এখানেই শচীনের শৈশব কাটে। গোমতী নদীর পাড়ে মাঝিদের গাওয়া ভাটিয়ালি, গ্রামীণ লোকসংগীত এবং বেদেদের সুর তাঁর অন্তরে সুরের বীজ বপন করে।

প্রথমে কুমিল্লা জেলা স্কুল, পরে ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন এসডি বর্মন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই গান গেয়ে পরিচিতি পান তিনি। ১৯৩০ সালে অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়েন। কলকাতা বেতার থেকে শুরু করে মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে সংগীত পরিচালকের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত তাঁর যাত্রা ছিল এক অনন্য অধ্যায়।

শচীনের সুরে গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, গীতা দত্তের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা। একই সঙ্গে তিনি নিজস্ব ভাটিয়ালি ছোঁয়া গলায় গেয়েছেন অসংখ্য গান। তাঁর পুত্র আর.ডি. বর্মণও ভারতীয় চলচ্চিত্রে সংগীতের নতুন মাত্রা যোগ করেন।

শচীনের জন্মভিটা একসময় ছিল প্রায় ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত প্রাসাদ। পাকিস্তান আমলে এর একটি অংশ সরকারি খামার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাধীনতার পরও ভিটেবাড়ি দখল, অবহেলা ও ধ্বংসের শিকার হয়। রাজবাড়ির অনেক অংশ ভেঙে যায়। চিহ্ন মুছে যেতে থাকে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক মহলের তাগিদে ১৯৯০-এর দশক থেকে সংরক্ষণের দাবি জোরালো হয়।

২০১৪ সালে জেলা প্রশাসন এই জায়গার একটি অংশ উদ্ধার করে। এরপর আংশিক সংস্কার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ হয়নি। ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে শুরু হয় ‘শচীন মেলা’। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভিটেবাড়ির ভেতরে শচীনের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version