দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

সিলেটের লোকজ ঐতিহ্যের অন্যতম আকর্ষণ ধামাইল নৃত্যগীত। একসময় বিয়ে,পূজা, অন্নপ্রাশন কিংবা গ্রামীণ আনন্দ-অনুষ্ঠান মানে সবকিছুতেই ধামাইল ছিল অপরিহার্য। নারীরা হাতেতালি দিয়ে চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে গান গাইতেন, তাতে ফুটে উঠত তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনের বেদনার বহিঃপ্রকাশ। সেই ধামাইল নাচ-গান আজ যেন বিলুপ্তির পথে। এই হারানো ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একজন সহজ সরল মানুষ, নাম তার রামকৃষ্ণ সরকার। তবে এখন আর সেই পুরনো সাজে ভালো নেই তিনি। রোগে-শোকে বিপণ্ণ হয়ে গেছে তার জীবন।

কয়েক মাস ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহায়ত্বের জীবন পার করছেন তিনি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামের সন্তান রামকৃষ্ণ সরকার। ছোটবেলা থেকেই ধামাইলের প্রতি ছিল গভীর টান। আশপাশের গ্রামে বিয়ের আসরে গিয়ে গোল হয়ে হাতেতালি দিয়ে নেচে ওঠা নারীদের ধামাইল নাচ তাকে মুগ্ধ করত। সেই টান থেকেই শুরু হয় তার আজীবনের সংগ্রাম। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন প্রায় তিন শতাধিক ধামাইল, কীর্তন, বাউল ও আধ্যাত্মিক গান।

শুধু সংগ্রহেই থেমে থাকেননি, এসব গানের সাথে নৃত্য ভঙ্গি মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শিখিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নবনাগরী ধামাইল সংঘ ও ধামাইল একাডেমি নামে সংগঠন। এখানেই শিশু থেকে মধ্যবয়সী ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীরা আজ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ধামাইল পরিবেশন করছেন, যা আবারও মানুষের মধ্যে আগ্রহ জাগাচ্ছে। তবে রামকৃষ্ণ সরকারের পথ মোটেও সহজ ছিল না। অভাব-অনটনের সংসারে থেকেও লোকসংস্কৃতিকে বাঁচাতে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন।

তার তিন মেয়ে সুমি, রুমি ও ঝুমি বাবার কাজে পাশে থেকেছেন সর্বদা। বাবার সঙ্গে গান সংগ্রহে যোগ দিয়েছেন, শিখেছেন ধামাইলও। কিন্তু বর্তমানে রামকৃষ্ণ সরকার অসুস্থ, চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারের। আজও রামকৃষ্ণ সরকার গুনগুন করে গেয়ে ওঠেন তার প্রিয় রাধারমণ দত্তের গান- আমার বন্ধু দয়াময়, তোমারে দেখিবার মনে লয়। সেই সুরে মিশে থাকে একদিকে জীবনের ক্লান্তি, অন্যদিকে সংস্কৃতি রক্ষার অদম্য তাগিদ। ধামাইল শুধু নাচ-গান নয়; এটি নারীর অনুভূতির ভাষা, সমাজ-সংস্কৃতির আয়না।

রামকৃষ্ণ সরকারের জীবন সংগ্রাম আমাদের মনে করিয়ে দেয় আধুনিকতার নামে পুরনোকে বিসর্জন দেওয়া কখনোই প্রগতির পথ নয়। বরং ঐতিহ্যের শেকড়েই নিহিত আছে নতুন প্রজন্মের ভিত্তি। ছোট মেয়ে ঝুমি সরকার বিষাদ কণ্ঠে বলেন, বাবা লোকসংস্কৃতিকে বাঁচাতে সারাটা জীবন দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনো সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা আমরা আজ পর্যন্ত পাইনি।

হতাশার সুরে স্ত্রী শুক্লা রানী সরকার বলেন, সংসার বড়ই কষ্টে চলে, মেয়েদের পড়ালেখা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। এখন স্বামীর চিকিৎসার ব্যয়ভাড় বহন করা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। এক বুক দীর্ঘশ্বাস আর আক্ষেপ নিয়ে রামকৃষ্ণ সরকার বলেন, আজ আমি অসুস্থ। শরীরের সীমাহীন ক্লান্তি আমাকে টেনে ধরে রাখে, কিন্তু তবুও আমি থামিনি। আমার নিঃশ্বাস যতদিন চলবে, ততদিন আমি ধামাইলকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাব। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমি আমার সমস্ত শ্রম, ভালোবাসা আর সাধনা উৎসর্গ করে যাব সিলেটের লোকোঐতিহ্য রক্ষায়। কারণ ধামাইল শুধু একটি নৃত্য নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের শিকড়, আমাদের প্রাণের ভাষা।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version