ইবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আলোচক এবং আস- সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ রাসূল (সা.) এর মধ্যে রয়েছে আমাদের উত্তম আদর্শ। তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করলেই সমাজে শান্তি, ন্যায় এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবী করিম (সাঃ)-এর কাজের তুলনা ইতিহাসে বিরল। আমরা তাঁর বহু নীতিকথা শুনি, উদাহরণ দেখি। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি নিজেই সেই নীতিগুলো জীবনে অনুসরণ করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন।
বুধবার (সেপ্টেম্বর ১০) সিরাতুন নবি (সাঃ) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুন্নাতে রাসুল্লাহ (সাঃ) শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সিরাত বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “মহানবী আমাদের সামনে যে জীবনদর্শন, আদর্শ ও নীতি রেখে গেছেন, সেগুলো আজকের অস্থির ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্বে সব সমস্যার সমাধানের জন্য সবচেয়ে বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন সহিষ্ণুতার নিদর্শন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে ভিন্নমত ও ভিন্ন আদর্শের মানুষকে সহ্য করতে হয় এবং তাদের সঙ্গে মিলেমিশে সমাজ গঠন করতে হয়।এ উদ্দেশ্যে তিনি যে মদিনা সনদ প্রণয়ন করেছিলেন, সেটি আজও পৃথিবীর ইতিহাসে একটি রোল মডেল—যেখানে ভিন্ন ধর্মের মানুষ একত্রে নিয়ে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে তাঁর ঘোষণাটি যুগান্তকারী ছিল “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি প্রদান করো।” এই নির্দেশে নিহিত আছে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের মূল পথনির্দেশ।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ ও বৈষম্য যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে, তা আমাদের সামনে স্পষ্ট। কিন্তু যদি আমরা মহানবীর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারি এবং মানুষকে সেই আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে সমাজ থেকে সব ধরনের জবরদস্তি, অত্যাচার ও হানাহানি দূর হয়ে যাবে। এটাই আমাদের প্রচেষ্টা হওয়াা উচিত।আমরা ফিলিস্তিনের দিকে তাকাই। সেখানে যে রকম গণহত্যা চালানো হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এবং সেই সব দেশ যারা মানবাধিকার শিক্ষা দেয়, তারাই এই বর্বরতা সমর্থন করছে এটি গভীর চিন্তার বিষয়। কিন্তু কি এমন একটি যুদ্ধ ইতিহাসে ঘটেছে, যা মহানবীর আমলে ঘটেছে, যেখানে একটি শিশুও নিহত হয়েছে? কেউ কি তা দেখাতে পারবেন? প্রশ্ন করা হয়েছে “শিশুদের সাথে যুদ্ধের কী সম্পর্ক?” এই প্রশ্নের মধ্যেই মানবতার মূল সংকেত নিহিত।
অনুষ্ঠানে সিরাতুন নবি (সাঃ) উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও ধর্মতত্ব ও ইসলামী শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও সিরাত বক্তা হিসেবে ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।