দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ

টাঙ্গাইলের নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদানের পর থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিজের দূর্নীতির সাম্রাজ্য গড়েছেন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহানাজ পারভীন।

গত ২০২৩ সালে জুলাই মাসে শুরু হয় নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১ম ব্যচের প্রশিক্ষণ। শাহানাজ পারভীন ২০২৩ সালের শেষের দিকে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দুর্নীতির দায়ে জনগণের ইট-পাটকেলের ঠিল ও ধাওয়া খেয়ে সোজা চলে আসেন নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে। ইতিপূর্বে তিনি সিলেট ও টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন।

চিরাচরিতভাবেই ভাবেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেই রপ্ত করে নেন বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর কৌশল।

এর ধারাবাহিকতায়, অর্থ আত্মসাৎ করতে ২০২৫ সালের মে মাসে চাকুরীচ্যুত করেন অটোম্যাকানিক ট্রেডের নাসির উদ্দীন, আহসান হাবীব ও গ্রাফিকস ডিজাইন ট্রেডের আকিমুন্নাহার নামের ৩ জন সৎ প্রশিক্ষক কে। এরা সবাই আজ চাকুরী হারিয়ে পরিবার, সন্তান নিয়ে দিশেহারা।
এদের পরিবর্তে নিয়োগ দেন এলাকায় কম চাহিদা সম্পন্ন সরকারি নিয়োগপ্রপ্ত গার্মেন্টস ট্রেডের শামীম আল মামুন নামের তার কথিত প্রেমিক কে। জনশ্রুত আছে, দুই স্বামীর সংসার ত্যাগ করে শাহানজ পারভীন এখন সহকর্মী শামীম আল মামুনের প্রেমে অন্ধ। দু’জনে মিলে নিয়মিত ভাবে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিভিন্ন উৎস থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে শাহানাজ পারভীনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আগত প্রতিটি প্রশিক্ষণ গ্রহীতার কাছ থেকে আবেদনের ফি বদাবদ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লোক দিয়ে নিয়ে থাকেন। কখনো আবার জামানত হিসেবে নেন হাজার টাক। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ৬২৫ জন প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছে। এসব প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে আনুমানিক ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।

প্রশিক্ষনার্থীদের প্রতি ব্যচের ইন্ডাস্ট্রি ভিজিটের জন্য বরাদ্দ থাকে ৭ হাজার টাকা। এ টাকা কখনোই তিনি প্রশিক্ষনার্থীদের ইন্ডাস্ট্রি ভিজিটের জন্য ব্যয় করেননি। যার আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়াও ৬২৫ জন প্রশিক্ষনার্থীর প্রশিক্ষণ শেষে জন প্রতি ৩৫০ টাকা বরাদ্দের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার থাকলেও শাহানাজ পারভীন এ কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকেই প্রশিক্ষনার্থীদের খাবার বদাবদ জন প্রতি মাত্র ২০-২৫ টাকা ব্যয় করে আসছেন। এ খাতে থেকে শাহানাজের অর্থ আত্মসাৎ এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকা।

মোটর ড্রাইভিং ট্রেডের প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য প্রতিদিন ২০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকলেও কখনোই তিনি ১০ লিটারের বেশী তেল বরাদ্দ করেননি। এবং শিক্ষার্থীদের টিটিসি এর চত্বরের বাইরে গিয়ে ড্রাইভিং এর সুযোগ দেননি কখনোই। এতে করে প্রশ্ন থেকে যায় একজন ড্রাইভিং ট্রেডের শিক্ষার্থী কি তার পূর্ণ বাস্তব শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছে?
এছাড়াও তিনি নিয়মবহির্ভূত ভাবে, একক সিন্ধান্তে সকল ক্রয়, ব্যয় ও বরাদ্দের নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। ক্রয় কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে ইচ্ছেমত বিলি ভাউচার করেন। এভাবেই প্রতিটি অর্থনৈতিক খাত থেকেই তিনি হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এসব টাকা দিয়ে ঢাকার অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা হতে সালনা বাজারের আগে কালার টেক নামক এলাকায় দুটি বাড়ির জায়গায় কিনেছেন। সেখানে আয়ন ভিলা নামে একটি দোতলা বাড়ি নির্মান করেছেন। পাশেই অপর একটি জায়গায় ক্রয় করে সেমি পাকা বাড়ি নির্মান করেছেন, যা আগামীতে ৫তলা ভবন নির্মান করবে বলে জানায় তার সহকর্মীরা। প্রশ্ন জাগে একজন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কত টাকা বেতন পেলে এমন দুইটি বাড়ির জায়গা ক্রয় করে একটি দোতলা এবং একটি অধা পাকা বাড়ি নির্মান করা সম্ভব?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মীরা জানায়,
সাবেক প্রথম স্বামী কেরানীগঞ্জের সিদ্দিকুর রহমান এবং ২য় স্বামী ময়মনসিংহের কেন্দুয়ার ওমর ফারুক আহাম্মেদ। শাহানাজ পারভীন এখন এদের কারো সাথেই ঘরসংসার করছেন না শামীম আল মামুন সাহেবের প্রেমের জন্য।

প্রশিক্ষনার্থী আবু বকর, আল আমিন, রানা ও সুপ্তি জানায়, তাদের কোন টি শার্ট, এপ্রোন, সুরক্ষা জুতো, ব্যাগ, হাতমোজা, ব্যচ, নিরাপত্তা চশমা এসবের কিছুই দেয়া হয়নি, যাও দেয়া হয় সেগুলো ব্যবহৃত। ট্রেনিং শেষে তা ফেরত নেয়া হয়। তারা আরো বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণ শেষে বিদায় অনুষ্ঠানে আমাদের ১ টি পাঁচ টাকার কেক এবং ১৫-২০ টাকা দামের ১টি সফট ড্রিংক দেয়া হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের দুপুরের খাবার জন্য জন প্রতি ৩৫০ টাকা বরাদ্দ ছিলো। আমরা সকল দূর্নীতির প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ আশা করি।

নাগরপুর টিটিসি’র চাকুরী হারানো অটোমোবাইল ট্রেডের সাবেক প্রশিক্ষক আহসান হাবীব ও নাসির হোসেন জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহানাজ পারভীন প্রতি মাসে বেতনের অর্ধেক টাকা দাবি করেন এবং এ টাকা তখনই বিকাশে পাঠাতে বলেন। শাহানাজ পারভীনকে পরদিন কিছু টাকা দেয়ার জন্য রাজি হলেও চাকরিচ্যুত করা হয় আহসান হাবীবকে। শাহানাজ পারভীনের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে টাকা না দিতে পারায় ঐ দিনই তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরদিন শাহানাজ পারভীনের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি আহসান হাবীবকে। তালে অপমান করে ঘার ধাক্কা দিয়ে টিটিসি চত্বর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, “আমি ক্রয় কমিটির সদস্য ছিলাম। আমার কাছ থেকে সাদা বিল ভাউচারে শাহানাজ পারভীন জোর করে স্বাক্ষর নিতেন এবং এসব কাগজের ক্রয় দেখানোর কোন কিছুই তিনি ক্রয় করেননি, সমান্য কিছু জিনিস ভাঙ্গারীর দোকান থেকে কিনে আনতেন তিনি। আমি একজন দক্ষ সার্টিফিকেটধারী প্রশিক্ষক, আমার পরিবর্তে এখানে অদক্ষ এবং ব্লক ও বুটিক ট্রেডের সরকারি চাকুরীজীবী শামীম আল মামুন সাহেবকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা সরকারি চাকুরীর বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শাহনাজ পারভীন, অদক্ষ ও সার্টিফিহীন শামীম আল মামুনেরকে এই ট্রেডে নিয়োগ দিয়ে যোগসাজশে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাক। নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ব্লক ও বুটিকের জন্য এখনো কোন প্রশিক্ষণ চালু হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেও শাহানজ পারভীন অধ্যক্ষ পরিচয় দেন এবং ওনার টেবিলের নামফলকেও অধ্যক্ষ শাহানজ পারভীন লেখা।
যদিও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসবাস করেন না ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহানজ পারভীন তবুও নিয়মবহির্ভূত ভাবে তিনি এ প্রতিষ্ঠান চত্বরে পালন করেন মুরগী,কবুতর ও পশু-পাখি। তার আবাসস্থলে থাকেন অন্য কেউ। চাকুরী হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে চায়না এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কেউ।

এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর অফিসে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহানজ পারভীনের সাথে দেখা করে কথা বলতে গেলে তিনি কোন সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেননি। পরে তার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বার বার ফোনের সংযোগটি কেটে দিচ্ছিলেন।

নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভয়াবহ দূর্নীতির বিষয়ে পরিচালক সালাউদ্দিন বলেন, নাগরপুর টিটিসি’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহানাজ পারভীনের দূর্নীতির বিষয়ে আমি অবগত নই তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। ড্রাইভার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরেজমিনে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ব্যতিরেখে ট্রেইনিং সম্পূর্ণ হয় না বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে সকল সেন্টারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অন্তবর্তী কালীন সরকার দ্রুত ফ্যাসিষ্ট দোষর শাহনাজ পারভীনের দূর্নীতির হাত থেকে নাগরপুর টিটিসি রক্ষা করে প্রকৃত প্রশিক্ষন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা জনসাধারণের।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version