বিশ্ব নেতারা যখন সংঘাতের অবসান ঘটাতে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই রাশিয়া সামরিক চাপ আরও বাড়িয়েছে। শনিবার মস্কো জানায় যে তাদের সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের দুটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে।
যারা ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল তাদের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকাও তার সমর্থন যোগ করেছে। রাশিয়ার সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ব্যয়বহুল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা লাইনের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে জানায়, তাদের বাহিনী স্রেডনে এবং ক্লেবান বাইক নামের দুটি গ্রাম দখল করেছে। ক্লেবান-বাইক দখল মানে হবে কোস্তিয়ানতিনিভকার দিকে আরও অগ্রগতি। যা ক্রামাতোরস্ক যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গনগরী এবং সেখানে ইউক্রেনের একটি বড় লজিস্টিক ঘাঁটি অবস্থিত।
শুক্রবার রাশিয়া দাবি করেছিল যে তাদের সেনারা দোনেৎস্ক অঞ্চলের আরও তিনটি গ্রাম দখল করেছে। অঞ্চলটি রাশিয়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত করার দাবি জানায়।
অন্যদিকে শনিবার ইউক্রেনের সেনারা জানায়, তারা রুশ অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়ে দোনেৎস্ক অঞ্চলের জেলেনি গাই গ্রাম পুনর্দখল করেছে। জুলাই মাসে রাশিয়া দাবি করেছিল যে গ্রামটি তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এটি দ্নিপ্রোপেত্রোভস্ক সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল।
রামাফোসার শান্তি সম্মেলন সমর্থন: রাশিয়ার সাম্প্রতিক অগ্রগতি এমন সময় ঘটছে যখন রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টদের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনের আশা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এমন এক সম্মেলনের পক্ষে জোর দিচ্ছিলেন।
শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোন আলাপে শান্তি সম্মেলনের আহ্বানে তার সমর্থন জানান।
তার কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট রামাফোসা রাশিয়া-ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। যা যুদ্ধের অবসানে প্রতিশ্রুতির দৃঢ় সংকেত দিতে পারে।
জি২০ – এর বর্তমান সভাপতি রামাফোসা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি আগামী সপ্তাহগুলোতে অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
গত সোমবার তিনি ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন, যাকে তিনি গত অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনে ‘প্রিয় মিত্র’ ও ‘মূল্যবান বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
তবে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এ বছর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে ভোট দেয়, যেখানে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানানো হয়।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি রামাফোসাকে জানিয়েছেন যে তিনি পুতিনের সঙ্গে যেকোনো ধরনের বৈঠকে প্রস্তুত।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, তবে আমরা দেখছি মস্কো আবারও সবকিছু বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোকে আহ্বান জানান, প্রাসঙ্গিক সংকেত পাঠাতে এবং রাশিয়াকে শান্তির পথে ঠেলে দিতে।
শুক্রবার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা থেমে যাওয়ার কারণে কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়নি। অন্যদিকে জেলেনস্কি রাশিয়াকে আক্রমণ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।