নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক অধ্যাপক যতীন সরকার (৯০) বুধবার বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরলোক গমন করেছেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান। বর্তমানে তাঁর মরদেহ ময়মনসিংহে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁর সহকর্মী, ছাত্র ও ভক্তরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে নেত্রকোনায় নিয়ে আসা হবে। রাতে স্থানীয় শশ্মানে তাঁর অন্ত্যষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর কিছুদিন কেন্দুয়ার আশুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বারহাট্টা উচ্চ বিদ্যালয় ও গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পরীক্ষা পাশ করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি নেত্রকোনায় ফিরে আসেন।
যতীন সরকার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের দুইবার সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ময়মনসিংহের উদীচী, মুক্তবাতায়ন পাঠচক্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ফোরাম, শব্দ আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, অনুপ্রাস, চরৈবেতি, জলদ প্রভৃতি সংগঠনের সক্রিয় কর্মী, সংগঠক এবং অভিভাবক ছিলেন।
যতীন সরকারের লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে প্রথম বইয়ের নাম ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যশা’। এরপর অন্তত আরও ৭০টি বই লেখেন।
উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে- ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’, ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’, ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’, ‘পাকিস্তানের ভূত দর্শন’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও সমাজ চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘রাজনীতি ও দুর্নীতি বিষয়ক কথাবার্তা’, ‘আমদের চিন্তার চর্চার দিক্ দিগন্ত, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’, ‘ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভুত ভবিষ্যত’, ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা’, ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’, ‘আমার রবীন্দ্র অবলোকন’, ‘সত্য যে কঠিন’, ‘বিনষ্ট রাজনীতি ও সংস্কৃতি’, প্রভৃতি।
যতীন সরকার স্বাধীনতা পদক (২০১০), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৭), খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পরস্কার (১৯৯৭), প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই পুরস্কারসহ (২০০৫) অসংখ্য পুরষ্কার-খ্যাতি পেয়েছেন।