জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ঘটা র্যাগিংয়ের ঘটনা ও এর পরবর্তী আপডেট বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে সাংবাদিককে বিব্রত করার অভিযোগ উঠেছে ইন্সটিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান। এঘটনার ভুক্তভোগী দুইজন সাংবাদিক হলেন আজকালের খবরের জবি প্রতিনিধি কামরুজ্জামান কায়েস ও আজকের কাগজের জবি প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান গোলাম রাব্বী।
আজ ১১ আগস্ট (সোমবার) বিকেলে আইআর বিভাগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ে শিকার হোন শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২৩-২৪ সেশনের নবীন শিক্ষার্থীরা। মানসিক নির্যাতনে জ্ঞান হারান এক নারী শিক্ষার্থী। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপর ঘটে যাওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে সেই বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা তাকে হেনস্থা করছেন।
এছাড়াও র্যাগিংয়ের বিষয়ে এক সাংবাদিক তার কাছে তথ্য চাইলে তিনি তথ্য দেওয়ার বদলে সাংবাদিকের পেশাগত পরিচয়ের বাইরে ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চান এবং কথোপকথনের মাঝে এক ধরনের হুমকির সুর প্রকাশ করেন। অতঃপর “পরে বিস্তারিত জানাব” বলে কল কেটে দেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের মতো গুরুতর বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এমন আচরণ শুধু সাংবাদিকের প্রতি অসম্মান নয়, বরং তথ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইআর বিভাগে কিছুদিন ধরে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা র্যাগিং ও হেনস্থার ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে প্রশাসনিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সাংবাদিক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিভাগীয় পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে উল্টো তিনি সাংবাদিকের নাম, ব্যক্তিগত ব্যাকগ্রাউন্ড ও অন্যান্য তথ্য জানতে চান, যা পেশাগত সীমার বাইরে চলে যায় বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই প্রশাসন র্যাগিং বন্ধ করুক। কিন্তু এখানে তো উল্টো সাংবাদিককেই চাপে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্যও ভয়ঙ্কর সংকেত।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু র্যাগিং রোধ করাই নয়, তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও জরুরি। তাদের মতে এমন আচরণ ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধানী কাজ করতে নিরুৎসাহিত করবে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আজকালের খবরের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, “আমি র্যাগিং এর ঘটনা ও এটার বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নিয়ে তা জানতে কল করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার প্রশ্নের সোজা উত্তর না দিয়ে উলটো আমাকে ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞেস করেন। তিনি এমনভাবে বলছিলেন যেন তিনি আমার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।”
ভুক্তভোগী আজকের কাগজের সাংবাদিক রোকনুজ্জামান বলেন, “একজন দায়িত্বশীল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকের কাছ থেকে এমন আচরণ হতাশাজনক এবং সাংবাদিকতার পেশাগত স্বাধীনতার পরিপন্থী। র্যাগিংয়ের মতো গুরুতর বিষয়ে তথ্য গোপন করা বা প্রশ্নকারীকে চাপে ফেলার প্রবণতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বচ্ছতা নষ্ট করে। মাত্র কয়েকদিন আগেও যেই গণতান্ত্রিক মুক্তির লক্ষে এতো রক্ত ঝড়ে স্বৈরাচারের পতন হলো সেই মনোভাব এখনও বিদ্যমান থাকাটা সত্যিই উদ্বেগজনক।”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “র্যাগিংয়ের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি, তবে সাংবাদিককে ঘিরে এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আগে জানতাম না। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিয়েছি।”