ইবি প্রতিনিধি:
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রশাসন। এসময় প্রশানসের উদ্যোগে সম্পাদিত ‘জুলাই স্মৃতিকথা’ নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন, বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হলগুলো থেকে পৃথক ব্যানারে র্যালিতে অংশগ্রহণ করে।
পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। পরে টিএসসিসিতে জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্ধোধন করা হয়।
সভা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে জাতীয় সংগীত ও জুলাই শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন দৈনিক আমার দেশ প্রত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। এসময় জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড.এমতাজ হোসেন, ইবি সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান, ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, গ্রীন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদ মুহাম্মদ রেজওয়ান উপস্থিত ছিলেন। ধর্মত্বত্ত অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বেগম রোকসানা মিলি এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারী, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনকে জঙ্গি কার্যক্রম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের পক্ষে ছিল তাদের সঙ্গে কোনো আপোষ করা চলবে না। এসময় এক সপ্তাহের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্র নেতারা।’ এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ বক্তৃতা প্রদান করেন। এসময় অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্টদেরকে চিহ্নিত করার জন্য কমিটি করা হয়েছিল। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার নির্দেশ দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল তোমরা দেখতে পাবে। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাসিস্টদের অপসারণ করা হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও ফ্যাসিস্ট শক্তির অপসারণ অবশ্যই হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, আগামীর নির্বাচিত সরকারের প্রতি আমার একটি পরামর্শ এবং আহ্বান আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের তরুণদের জন্যে আবশ্যিক মিলিটারি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ যদি আমরা আমাদের তরুণ জনগণকে মিলিটারি ট্রেনিং দিয়ে রাখতে পারি তাহলে যখন আমাদের এক্সটারনাল থ্রেট আসবে আমি নিশ্চিত , আমাদের তরুণ সমাজ সেই এক্সটারনাল থ্রেটকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। কারণ আমাদের তরুণরা দেখিয়েছে তারা বুলেটকে ভয় পায় না। আবু সাঈদ দেখিয়েছে যে বুলেটের সামনে, বন্দুকের সামনে কিভাবে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। তাহলে যদি এটাই আমাদের তারুণ্যের সাহস হয়ে থাকে তাহলে সেই তরুণকে যদি আমরা মিলিটারি ট্রেনিং দিতে পারি, তাহলে আমি মনে করি আল্লাহর রহমতে এমন শক্তি নাই যারা ১৮ কোটি মুসলমানের দেশকে অবনত করতে সক্ষম হবে।’