জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল:
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের আজকের এই দিনে (৪ আগস্ট) নড়াইল সদরের মালিবাগে মিছিলে যাওয়ার পথে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম সালাউদ্দিন ও সেক্রেটারি তাজ মোহাম্মদকে জখম করে ছাত্রলীগ। নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল সিকদার নীলের নেতৃত্ব ১০-১২ জন সন্ত্রাসী তাদের পিটিয়ে ও ধারালো চাকু দিয়ে পোচ মেরে জখম করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে মালিবাগ মোড়ে ছাত্রজনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর কথা ছিল৷ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেছনে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এদিন সকালে দশটার কিছু আগে নড়াইল পৌরসভার পুরাতন বাস টার্মিনালের আইডিয়াল প্রিন্টিং প্রেস থেকে মিছিলের একটি ব্যানার নিতে আসেন জেলা শিবিরের বর্তমান সভাপতি সালাউদ্দিন ও সেক্রেটারি তাজ মোহাম্মদ।
এসময় তাদের দেখে পথিমধ্যে গতিরোধ করে ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম ভূঁইয়া। এরপর সে বলে, “তোরা কেন আন্দোলনে যাচ্ছিস? তোরা তো জামায়াত-শিবির করিস।” এই বলেই সালাউদ্দিন, তাজ ও আরও অজ্ঞাত দুই আন্দোলনকারীকে হেলমেট ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকে নাঈম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল সিকদার নীল, ছাত্রলীগ নেতা সাজিদ সহ ৮-১০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার। এসময় সালাউদ্দিনের ব্যবহৃত স্মার্টফোন ও পকেটে থাকা টাকা-পয়সা ছিনতাই করে তারা৷ পরে সুযোগ বুঝে হামলাকারীদের থেকে ছুটে দৌড়াতে থাকেন সালাউদ্দিন। এসময় দৌড়ে চরেরঘাট এলাকার দিকে আগালে পেছন থেকে ধাওয়া করে অজ্ঞাত দুই ছাত্রলীগ কর্মী। এরপর তারা তাদের কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে সালাউদ্দিনের হাতে পোচ মারে। এতে রক্তাক্ত হন ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন। এদিকে সেক্রেটারি তাজ মোহাম্মদসহ আরও ৩ আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে চলে যায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
দুঃসহ সেদিনের স্মৃতিচারণ করে ভুক্তভোগী নড়াইল জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম সালাউদ্দিন বলেন, সেদিন ছাত্রলীগ সভাপতি নাঈমসহ কয়েকজন আমার মোবাইল ছিনতাই করে। পরে অবশ্য এক মসজিদের ইমামের মাধ্যমে আমার মোবাইল ফেরত দিয়েছে। এছাড়াও আমার শরীরে চাকু দিয়ে পোচ মেরে জখম করে ছাত্রলীগের জঙ্গিরা। এখনও সেখানে স্থায়ী দাগ হয়ে গেছে। তবুও আমি এতদিন এটা নিয়ে কোথাও ক্রেডিট নেইনি বা কোনো সুযোগ-সুবিধা দাবি করিনি। নিশ্চয়ই আল্লাহ এর জন্য উত্তম প্রতিদান দিবেন।
সেক্রেটারি তাজ মোহাম্মদ বলেন, আমাদের উপর সেদিন অমানবিক অত্যাচার করে ছাত্রলীগ। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে তার মানে এই নয় যে, তারা আবার এই বাংলার মাটিতে রাজনীতি করবে৷ তারা এখনও নড়াইলের মাটিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তারা রাতের আঁধারে ছাত্রজনতার দেয়াল লিখন মুছে দিয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান লিখছে। তাদের এ দুঃসাহস অব্যাহত থাকলে, তাদের প্রতিহত করা হবে।
তবে নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম ভূঁইয়া ছাত্র আন্দলনে হামলার একাধিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিক একাধিক মামলার আসামি সাধারণ সম্পাদক সপ্নিল শিকদার নিল পলাতক থাকায় এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।