ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, সাজিদ হত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সাজিদের হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হবে। যেহেতু এটি একটি হত্যাকাণ্ড, তাই বিষয়টি এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আওতায় যাবে। ভিকটিমের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং আজকের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক মামলা রুজু করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছি এবং আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোমবার ( ৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য আরও বলেন, ‘গতকাল পাওয়া ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আজ অফিসিয়াল কার্যদিবসের শুরুতেই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে নিশ্চিত করতে চাই, সাজিদ হত্যায় জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা যাতে স্বাভাবিকভাবে চলে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি জানাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হবে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, জিয়া পরিষদ ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা ‘বিচার বিচার বিচার চাই’, ‘সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার ভাই কবরে, প্রশাসন কি করে,’ ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘দঁড়ি লাগলে দঁড়ি নে, খুনিদের ফাঁসি দে,শ্বাসরোধে হত্যা কেন, জবাব চাই, দিতে হবে, খুনিদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক একশন ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো ক্যাম্পাস।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সাজিদকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সাজিদ হত্যার বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগে মামলা করতে হবে। একইসাথে নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে প্রস্তাবিত ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের জবাব দিতে হবে। অন্যথায় পুরো ক্যাম্পাস শাটডাউনের ঘোষণা করা হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নূর আলম বলেন, ‘সাজিদ হত্যার বিচার ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। সাজিদের স্বপ্ন, তার পরিবারের স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ও জাতির একটি স্বপ ভঙ্গ করেছে। আপনারা পিবিআইকে দায়িত্ব দিতে চাচ্ছেন।আমাদেরকে জানাতে হবে, দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়া কেমন হবে?, কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে? এবং আমাদের পূর্বের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জবাব দিতে হবে।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজকে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।আমরা জুলাইয়ের বিপ্লবের পর একজন জুলাই যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।।জুলাইয়ের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যে প্রশাসন এসেছে, তারা আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রশাসন তাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে অনেক দাবিই দিয়েছি কিন্তু আজকে আমাদের একটাই দাবি সিআইডি, পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়ে খুনিদের চিহ্নিত করে ফাঁসি দিতে হবে। অবশ্যই সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যাকারীকে বের করতে হবে। অন্যথায় এ প্রশাসনকে আসসালামু আলাইকুম দিতে বাধ্য হবো।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘দেরীতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফরেনসিক রিপোর্টের পর একটা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কোনো লাশ দেখতে চাই না। আর যেন ফুলপরীর মতো কোনো ঘটনা না ঘটে। সাজিদ হত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি বা পিবিআইকে দায়িত্ব দিতে হবে। কতদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের বিচার করবেন তা প্রশাসন থেকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘আপনারা সাজিদ হত্যার বিচার নিশ্চিতে পিবিআই এর নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাচ্ছেন।আমাদেরকে জানাতে হবে দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়া কি ধরনের হবে? কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে? কাজের অগ্রগতি ব্রিফ করে জানাতে হবে এবং আমাদের পূর্বের দাবিগুলো বাস্তবায়নের সঠিক জবাব দিতে হবে। জুলাই যোদ্ধা সাজিদের হত্যার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয় জুলাই যোদ্ধাদের জীবন নিরাপদ নয়। অবশ্যই জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, সাজিদের মৃত্যুর প্রকাশিত ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সর্বশেষ সাজিদের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।