ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী
সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে জাস্টিস ফর সাজিদ ক্যাম্পেইন করেছে একাংশ শিক্ষার্থী। এসময় ‘ECHOES OF SAJID’ শিরোনামে সাজিদ আব্দুল্লাহর স্মৃতি অ্যালবাম সম্বলিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এসময় সাজিদের দারাজ কন্ঠে কাওয়ালীর মঞ্চ মাতানোর স্মৃতি অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখেন দর্শকরা। কিন্তু তার রহস্যজনক মৃত্যুতে আর কাওয়ালীর মঞ্চ মাতাবেন না সাজিদ।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে জাস্টিস ফর শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহ। এসময় সাজিদের সহপাঠী, বন্ধু ও শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ডকুমেন্টারিতে সাজিদের দারাজ কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত, কাওয়ালী, হামদ, নাতে রাসূল,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাজিদের ভূমিকার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এছাড়া হল পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার, মেডিকেলে নেওয়া, তার জানাজা, বাড়িতে নিয়ে কবর দেওয়া, সাজিদের বাবার আর্তনাদসহ সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংগ্রামের স্মৃতি প্রদর্শন করা হয়।
সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি। তার এ রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সাজিদ আব্দুল্লাহর স্মৃতি অ্যালবাম প্রদর্শনী
ডকুমেন্টারি দেখে এক শিক্ষার্থী বলেন,
‘সাজিদ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু ও কিছু স্মৃতি রেখে গেছে। আজ মেইন গেটে ওর কিছু ভিডিও ছবি দেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখছেন। আমার গায়ের লোম শিউরে উঠেছে বারবার। আমি ওকে পারসোনালি চিনতাম না তবে আমি ভীষণ অনুভব করি ওর পরিবার ওর কাছের মানুষের অবস্থা।’
আয়োজকের একজন সাজ্জাদ সাব্বির বলেন, ‘সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে আজ ১০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। প্রশাসন দিব্যি আরামে তাদের সময়গুলো পার করছে। ক্যাম্পাসে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যেন এখানে কিছুই হয়নি।
আজকে সাজিদের জায়গা আমরা অন্য কেউ হতে পারতাম। আজকে যারা সাজিদকে হত্যা করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা সহ আরও অনেকগুলো পক্ষ যারা এসব হত্যাকান্ড করতে অভ্যস্ত, তারা ধরেই নিচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে হত্যা করা হলে এর কোনো বিচার হয় না, এর কোনো তদন্ত হয় না। এতে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা সকলেই সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬ টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ক্যাম্পাসে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে ফের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে চলতি সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।