নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে নীলফামারীর রাজনীতি। জেলার চারটি আসনেই এখন স্পষ্টভাবে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। হাট-বাজার, চায়ের দোকান, গ্রামের মোড় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান—সব জায়গায়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভোট ও প্রার্থীরা। নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন উঠান বৈঠক, পথসভা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন নিজেদের অবস্থান, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সরব প্রচারণা। পোস্টার, ব্যানার ও শুভেচ্ছাবার্তায় মুখর হয়ে উঠেছে শহর ও গ্রাম। স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন পর এমন একটি নির্বাচন আসছে, যেখানে মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে ভোট নিয়ে ভাবতে পারছে। চার আসনে প্রার্থীদের প্রস্তুতি ও অবস্থান নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা): এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে ঘিরে চলছে প্রচারণা। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। ইসলামী আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও সক্রিয় রয়েছে।
নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা): এখানে comparatively আওয়ামী লীগের প্রচারণা কম থাকায় বিরোধী দলগুলো বেশ সক্রিয়। জামায়াতের অ্যাডভোকেট আলফারুক আব্দুল লতীফ, বিএনপির এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল ও অ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল মাঠে রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপির প্রার্থীরাও প্রচারে। নীলফামারী-৩ (জলঢাকা): জামায়াত-অধ্যুষিত এই আসনে দলটির প্রার্থী অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ সালাফী।
বিএনপির পক্ষে লড়ছেন সৈয়দ আলী ও ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী (কমেট)। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে রয়েছেন আমজাদ হাসান। নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ): জামায়াতের একক প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। বিএনপির পক্ষে রয়েছেন সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনিন, আব্দুল গফুর সরকার ও অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান। এনসিপির আবু সাঈদ লিয়ন ও ইসলামী আন্দোলনের শহিদুল ইসলামও প্রচারে সক্রিয়। ভোটারদের মনোভাব ও প্রত্যাশা এক হাটে কথা হয় কৃষক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “ভোট দিতে পারবো কি না, এটা আগে চিন্তার বিষয় ছিল। এবার একটু আশাবাদী। ঠিকমতো ভোট দিতে পারলে ভালো প্রার্থীকেই ভোট দেব।” প্রথমবারের ভোটার তানিয়া আক্তার বলেন, “এটাই আমার প্রথম ভোট। আগে শুধু শুনতাম ভোট কারচুপি হয়, এবার নিজের ভোট নিজেই দিতে চাই।” শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, “মানুষ এখন দল নয়, ব্যক্তিকে দেখে। কে এলাকার জন্য কাজ করেছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।” জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের কাজ চলছে পুরোদমে।
ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জেলায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে। এতে করে চারটি আসনেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।