আমিনুল হক, সুনামগঞ্জ
হাওর-বাওর, নদ-নদী বেষ্টিত সুনামগঞ্জ। চারদিকে সীমান্ত, খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড় ঘেষা অপরুপ রূপবৈচিত্র সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ জেলায় ছোট-বড় ১০৬টি নদী রয়েছে। আগেকার দিনে সুরমা নদী হয়ে যে নালা বা ছোট নদী ছিলো সেগুলো ব্যবহার করে মানুষ নৌকা যোগে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতো। কিন্তু, এখন এই ছোট নদীগুলো ভরাট হওয়ায় নৌকার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও পলি ভরাটে প্রায় অধিকাংশ নদীই ভরাট হয়েছে।
পলি পড়ে ভরাট হয়ে পুরাতন সুরমা নদী তার রূপ যৌবন হারিয়ে ফেলছে। হারিয়ে যাচ্ছে জেলার মানচিত্র। তবে নদী রক্ষায় এরইমধ্যে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় যেসব খরস্রোতা নদীগুলো ছিল, এখন সেগুলো আর দেখা যায় না। পলিমাটি পড়ে অনেক নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে নদীপথে নাব্যসঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম সুনামগঞ্জের পুরাতন সুরমা নদী। ৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি সুনামগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নেত্রকোনার ধনু নদীতে মিশেছে।
একসময় এই নদী দিয়ে কার্গো জাহাজ, লঞ্চ চলাচল করলেও বর্তমানে পলিমাটি ও বালি পড়ে ভরাট হওয়ায় ডিঙি নৌকা চলাচলও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জেলার খরচার হাওরের অধিকাংশ জমিও পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় অনাবাদী থেকে যায়। জেলার সুরমা নদী পাড়ের বাজারগুলোর সাপ্তাহিক হাট এখন নদীর চরে বসে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের টুকের বাজার এর বিশিষ্ট ব্যবাসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, সুরমা নদী অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে। পুরো হেমন্তকাল নদীর চরেই হাট বসে। অবস্থা খুবই সুচনীয়।
তলদেশ ভরাট হওয়ায় স্থানীয়রা ধান চাষ, গবাধিপশু চরানোসহ খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছেন। ইনাত নগর গ্রামের নুরুল হক বলেন, শুধু পুরাতন সুরমা নয়, একই অবস্থা জেলার সকল নদীর। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের ১২০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত জাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই ও পাটলাই নদীতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালিমাটি ও পলি জমে নদী ভরাট হচ্ছে। ফলে ১৩৬ কিলোমিটার নৌপথজুড়ে দেখা দিয়েছে চরম নাব্য সংকট।
এতে আটকা পড়ে আছে শতাধিক মালবাহী বাল্কহেড। নদী তীরবর্তী বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, এক সময় জেলার এই নদীপথে জাহাজ, লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা চলাচল করত। নদীতে মাছ ধরা যেত। নৌপথে মানুষ সাচন্দে চলাচল করতো। পলি ভরাটের ফলে নদীগুলো নদী পথে চলাচল কমে গেছে। রাজার গাঁও গ্রামের শাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবী সুনামগঞ্জের প্রতিটি নদী যেন দ্রুত খনন করা হয়। এতে নদীগুলো তাদের যৌবন ফিরে পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জের প্রতিটি নদী রক্ষায় এরইমধ্যে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব নদী খননে দ্রুত উদ্যোগ নিলে একদিকে যেমন নদীগুলো তার পুরোনো যৌবন ফিরে পাবে, অন্যদিকে আবারো নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য জমজমাট হবে। জেলার অর্থনীতির গতি আরো বৃদ্বি পাবে। #