নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় লেংগুরা ইউনিয়নের একটি পুরোনো পাহাড়ি পথকে চলাচলযোগ্য করতে গিয়ে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ উঠলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে কোনো পাহাড় কাটা হয়নি, কাটা হয়নি গাছও। সাম্প্রতিক কালবৈশাখী ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছগুলো সরিয়েই রাস্তাটি সংস্কারের কাজ চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লেংগুরা ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ী সুবেন ঘাঘড়ার টিলা থেকে চৈতানগর মহসিন মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক দশমিক ১২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ কয়েক দশক ধরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং পর্যটকদের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্ষায় কাঁদায় মাখা পিচ্ছিল এই পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে স্থানীয় প্রশাসন কাবিখা প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটির সমতলকরণ ও মাটি ফেলার কাজ শুরু করেছে।
লেংগুরা ইউপি চেয়ারম্যান ও কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, এটি বহু পুরোনো চলাচলের রাস্তা। এখানে কোনো নতুন পাহাড় কাটা হয়নি। ঝড়ে ভেঙে পড়া কিছু গাছ রাস্তা থেকে সরিয়ে সংস্কার কাজ চলছে। এলাকাবাসীর বহুদিনের চাওয়া ছিল এই পথটি উন্নয়ন করার। এরই প্রেক্ষিতে এখন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, পাহাড়ের গা ঘেঁষা পুরোনো এই পথে মাটি ফেলে সমান করা হয়েছে। আশপাশে পাহাড় কাটা বা গাছ কাটার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। এটি পুরোনো পথ, নতুন করে কিছুই নষ্ট বা ধ্বংস করা হয়নি।
এই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৯০ ঊর্ধে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সুবেন মানখিন। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে এই রাস্তা দিয়ে বাবা-দাদার সঙ্গে চলাফেরা করেছি। অনেক কষ্ট করে চলতে হতো। এখন রাস্তা সংস্কার হওয়ায় আমরা খুব খুশি।
স্থানীয় তপন সাংমা, চুহিন হাজং, জুই ঘ্রা, পীযূষ বণিক ও রফিকুল ইসলাম তারা বলেন, এটি পুরোনো রাস্তা, নতুন করে কিছুই কাটা হয়নি। বরং আমাদের চলাচলের সুবিধার জন্য যেই পথে আমরা আগে চলতাম, সেটাই উন্নয়ন করা হচ্ছে। এজন্য আমরা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে তারা রাস্তা পাকাকরণের দাবি জানান সরকারের কাছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, এই রাস্তা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও পর্যটকদের যাতায়াতের একমাত্র পথ। পুরোনো রাস্তাটিকে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো পাহাড় কাটা হয়নি।
স্থানীয়দের অভিমত, উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনগণের স্বার্থ, উভয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই প্রকল্পে সেই ভারসাম্য বজায় রেখেই কাজ হচ্ছে বলে তারা মত দিয়েছেন।