নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রশাসনের এক ঊধবর্তন কর্মকর্তার বাসার দরজার সামনে চার চাকার গাড়ি প্রবেশের সুবিধা করে দিতে উপজেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফটক নিমার্ণের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রমও প্রায় শেষের দিকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন- একজন সরকারি আমলার একক সুবিধার্থে অহেতুক বড় ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। যদিও বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সীমানা প্রচীরের দক্ষিণ দিকের বাইরে স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য পৌরসভার উদ্যোগে ঢালাই রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই রাস্তার পাশে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তারের বাস ভবন রয়েছে। রাস্তাটি সরু থাকায় তিনি সরাসরি গড়ি নিয়ে বাসায় যেতে পারেনা। তাই সীমানা প্রচীর ভেঙে পরিষদের মধ্যে দিয়ে গাড়ি নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাঁর বাসার কাছে গত ২৯ মার্চ ভোরে ঠিকাদারের লোকজন প্রায় ১২ ফুট প্রস্তের মতো সীমানা প্রচীর ভেঙে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। ওই সময় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছুটিতে ছিলেন। তখন ঠিকাদার মজনু খন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সড়ক নির্মাণ কাজের মালামাল পরিবহণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেয়ালটি সাময়িকের জন্য ভাঙা হয়েছে। কাজ শেষে পুনরায় দেয়াল করে দেয়া হবে। সম্প্রতি কাজ শেষ হলে স্থানীয় লোকজন পরিষদের পুকুর ব্যবহার ও মসজিদে নামাজ পড়তে প্রচীরের ভাঙা অংশে একটি পকেট গেইট নির্মাণের দাবি জানায়। পরে প্রশাসন সেখানে চার ফুট প্রস্তের একটি পকেট গেট করে দেয়। কিন্তু এখন ওই স্থানে বড় ফটক নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যায় সে জন্য স্থানীয় কয়েকজন এ ব্যাপারে আবেদনও করেছেন। এর প্রেক্ষিতে গত রোববার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপপরিচালক বিপিন বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বিপিন বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, শুধু গেইটের স্থান দেখতে নয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করতেই তিনি এসেছিলেন। তবে স্থানীয় একটি পক্ষ বলছে সেখানে বড় ফটকের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ রাস্তাটি কোথাও ১০ ফুট কোথাও আট থেকে ছয় ফুটের মতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘মূলত অতিরিক্ত কমিশনারের বাসার দরজার সামনে গড়ি যাওয়ার জন্য প্রভাব খাটিয়ে সেখানে ফটক করা হচ্ছে। অথচ ফটকের স্থান থেকে কর্মকর্তার বাসার দূরত্ব সর্ব্বোচ ১০ গজের মতো। আর দুর্ঘটনা হলে পরিষদের ভেতরে অনায়াসে গাড়ি রেখে ফায়ার সার্ভিস কিংবা এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যাবে।’
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ‘এভাবে সীমানা প্রচীর ভেঙে একাধিক গেট করার কোন প্রয়োজন নেই। এতে পরিষদ অরক্ষিত হয়ে যেতে পারে। যদি ওই কর্মকর্তার বাসার সামনে বড় গেই করা হয় তবে পূর্বপার্শে চন্দগাতী এলাকাতে যে গেইট নির্মাণের দাবি করেছিল স্থানীয়রা তাও বাস্তবায়ন করতে হবে।’ এদিকে, উপজেলা কোয়ার্টারে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা প্রশাসন বরাবর যত্রতত্র গেইট নির্মাণ বন্ধে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘জনস্বার্থ বিবেচনায় কাজ করে প্রশাসন। পরিষদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের আগেই চতুর্পাশে বেশকটি গেট ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো বন্ধ করা হয়। এখন লিখিত দাবি ও কমিশনার কার্যালয়ের লিখিত নির্দেশনায় পকেট গেইট পুন:নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া বড় ও ছোট গেইট স্থাপনে একাধিক আবেদন পরেছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। পরিষদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্মকর্তার বাসার সামনে গাড়ি যাওয়ার জন্য গেইট নির্মাণ করা হচ্ছে না। এলাকাবাসীর স্বার্থে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, এটি উপজেলা পরিষদের বিষয়। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। যতটুকু জানি প্রতিবেশীদের গেইট নির্মাণের দাবির পেক্ষিতে সড়ক ও গেইট হচ্ছে। অহেতুক আমাকে জড়ানো হচ্ছে।’