দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৮৬৪ জন নিহত ও ১৪ হাজার আহত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার সার্বিক পরিস্থিতির বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন হাসপাতালগুলোতে পরিদর্শন করতে গেলাম তখন দেখলাম কারো চোখ নেই, পা নেই, হাত নেই। আমরা প্রথমে তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করার উদ্যোগ নিলাম। কতজন শহীদ হয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন এটার ডেটাবেইজ তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেকে হাসপাতালে ভর্তির সময় ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছেন, অনেকে মোবাইল নম্বরের জায়গায় অন্যের নম্বর ব্যবহার করেছেন। এ পর্যন্ত আমরা ডাটাবেজে যা পেয়েছি সেখানে শহীদ হয়েছেন ৮৬৪ জন। আহত ১৪ হাজারের বেশি। কিছু এখনো ভ্যারিফাইয়ের পর্যায়ে আছে। যেগুলো ভ্যারিফাই না হলে দিতে পারছি না।

আহত-নিহতের সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব ছিল যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য চিকিৎসা। নিহতের জন্য কিছু করা। পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন করলেন। সেখান থেকে তাদের সহায়তা করা হয়েছে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যারা শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ত্রিশ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। সে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। যারা আহত তাদের স্বাস্থ্যকার্ড দেওয়া হবে। তারা আজীবন ফ্রি চিকিৎসা পাবেন।

আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এ আন্দোলনে এমনও আহত দেখেছি যাদের নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও দ্বিধান্বিত ছিল তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে। পরে এ বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাপ করি। প্রধান উপদেষ্টা বললেন যদি প্রয়োজন হয় তাদের বিদেশে পাঠাতে এবং মেডিকেল বোর্ড করতে। পরবর্তীতে আমরা প্রত্যেকটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছিলাম। যাদেরকে এই কমিটি বলবে তাদের চিকিৎসা এখানের চেয়ে বাইরে ভালো হবে আমরা তাদের বাইরে পাঠাবো। এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নীতিমালা ছিল না। যে কারণে সমস্যা দেখা দিলো। পরবর্তী সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম মানুষকে তো আমাদের বাঁচাতে হবে। পরে নীতিমালা ছাড়াই প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলে আমরা তাদের বিদেশে পাঠাই। অনেকে এমনও আহত ছিল তাদের সাধারণভাবে পাঠালে হবে না, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পাঠাতে হবে। আমরা মোট চারজনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নাই। বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে। প্রথমদিকে টাকা পেমেন্ট নিয়েও সমস্যা হয়েছে। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের সময় ডলারের অবস্থাও খারাপ ছিল। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকও ইতস্তত বোধ করছিল ডলার কোথায় পাবে। আমরা এ পর্যন্ত ৪০ জনকে বিদেশে পাঠিয়েছি। তার মধ্যে ২৬ জন গেছেন ব্যাংককে। ১৩ জন গেছেন সিঙ্গাপুরে। একজন গেছেন রাশিয়ায়। ইতোমধ্যে ২৬ জনের মতো দেশে ফিরেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আরও আট জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। এটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদেরও বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। আমরা ২১ জনকে টার্কিতে পাঠানোর চেষ্টা করছি। ৩১ জন যাবে পাকিস্তানে।

আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে চোখ হারিয়েছেন ৭০০ জন। তার মধ্যে দু-চোখ হারিয়েছেন ২১ জন। এক চোখ হারিয়েছেন সাড়ে চার শ’র মতো। এসব রোগীর যে মানসিক ট্রমা সেটা চিকিৎসার জন্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার দরকার সেটা আমাদের এখানে নেই। তবে, তাদের এই মানসিক ট্রমা কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ দায়িত্ব শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের না। এ দায়িত্ব আমাদের সবার।

বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের কূটনীতিক সম্পর্ক উপলক্ষ্যে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দিবে চীন সরকার এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে দেবে চীন। এ হাসপাতালটি রংপুরে স্থাপিত হবে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেশটি উপহার হিসেবে এ হাসপাতালটি নির্মাণে অর্থায়ন করবে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলা কমিটির মাধ্যমে আহত ও নিহতদের শনাক্ত করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিব ছিলেন সিভিল সার্জন। যেহেতু তারা কাছাকাছি ছিলেন সেজন্য শনাক্তকরণে অনেক সুবিধা তাদের কাছে ছিল। এখনও কিছু আবেদন আমাদের কাছে আসছে। সেগুলো আমরা ভ্যারিফাই করবো। এটি একটি বড় কাজ। সেজন্য ভুল ত্রুটির সম্ভাবনা থাকে। তবে, প্রকৃত যোদ্ধারা যাতে এ তালিকায় আসে সেজন্য যারা এ কাজ করেছে তাদের আমরা অনুরোধ জানিয়ে ছিলাম। সেক্ষেত্রে আমরা কোন আন্তরিকতার ঘাটতি দেখাইনি। যে যেখানে আছেন আমরা সেখানেই তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল খায়ের বলেন, সাধারণত আমাদের চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু আন্দোলনের সময়ে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন চিকিৎসা নিতে এসেছে। আগস্টের দুই, তিন, চার ও পাঁচ তারিখে প্রায় ৭০০ জন রোগী আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছে। সব রোগী গুলির আক্রান্তপ্রাপ্ত। আমরা এ সময়ে সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করেছি। আমাদের কোন অবহেলার কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয়। ওই সময়ে রাতদিন আমাদের অপারেশন থিয়েটার খোলা ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি আহতদের চোখ যতটুকু সম্ভব ক্ষতি কমানো। পরবর্তী সময়ে আমরা যখন দেখলাম রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে তখন বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিয়া হাসপাতালের সহযোগিতায় আমরা দ্রুত সময়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসকরা আসেন। তাদের এদেশে আনার উদ্দেশ্য ছিল আমরা যে চিকিৎসা করছি সে চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন আনা দরকার কিনা। তারা চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে কোনো ত্রুটি দেখতে পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version