জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শাখার ক্যাশিয়ার প্রাথমিকভাবে ৭০–৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাহকেরা আজ রোববার সন্ধ্যায় ব্যাংকটির ওই এজেন্ট শাখার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। রাত নয়টায় সেখানে গিয়ে প্রচুর লোকজন দেখা গেছে। গ্রাহকেরা বলছেন, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। আগামীকাল সোমবার তাঁরা সেখানে যাবেন। কত টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, তখন বিস্তারিত জানা যাবে। তাঁরা এজেন্ট ও জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
২০১৮ সালে আক্কেলপুর পৌর শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটি খোলা হয়। সেখানে প্রায় দুই হাজার হিসাব আছে। ব্যবস্থাপক, ক্যাশিয়ারসহ তিনজন কর্মকর্তা আছেন ওই শাখায়। অভিযুক্ত মাসুদ রানা শুরু থেকে ব্যাংকটিতে ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার হিসাব থেকে টাকা উধাও হওয়ার পর টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধরা পড়ে। মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি ফিরোজ আহমদ জানান, তাঁদের মাদ্রাসার হিসাবে ৩৯ লাখ টাকা ছিল। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। দীর্ঘদিন ধরে মুঠোফোনে ব্যাংক থেকে টাকা জমা ও উত্তোলনের কোনো খুদে বার্তা আসত না। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা আজ ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখায় যান। সেখানে গিয়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণী নেন। ওই হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, মাত্র ১৭ হাজার ২৯৯ টাকা রয়েছে। তাঁরা হিসাব বিবরণী নিয়ে এজেন্টে শাখায় এসে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ারের সঙ্গে বসেন। তখন ক্যাশিয়ার তাঁদের প্রতিষ্ঠানসহ অন্য ব্যক্তিদের হিসাব থেকে কৌশলে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলমকে জানান। সন্ধ্যার পর পুলিশ ওই শাখায় আসে। খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন গ্রাহকেরাও সেখানে আসেন।
আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোমিন বলেন, তাঁর হিসাব থেকে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন।
ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা বলেন, তিনি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে কৌশলে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। এই টাকায় গ্রামের বাড়ি পাঁচবিবির রহমতপুরে জমি কিনেছেন ও বন্ধক নিয়েছেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা বলেন, ‘ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা এভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা আগে জানতাম না। আজ কয়েকজন গ্রাহক এসে খোঁজ নেওয়ার পর ঘটনাটি জানতে পেরেছি।’
আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, ‘আমি প্রথমে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি। এখন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে শুনতে পাচ্ছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা করা হবে।