নিজস্ব প্রতিবেদক: জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে নূরজহান বেগম (৪৮) নামের এক গৃহবধূকে জবাই করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের আঘাতে নিহত নূরজাহানের স্বামী বাবুল মিয়া, সন্তান ও শাশুড়ি আহত হন।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ভোর রাত ৩টার দিকে আটপাড়া উপজেলার অভয়পাশা ইউনিয়নের গণিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত গৃহবধূ নূরজাহান একই গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক দম্পতিকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আটপাড়া থানার ওসি মো. আশরাফুজ্জামান। আটক হওয়া দম্পতি হলেন লাল মিয়া (৬৬) ও মঞ্জুরা বেগম (৫৮)।
স্থানীয়, নিহতের পরিবার ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একে অপরের প্রতিবেশী বাবুল মিয়ার সঙ্গে তাঁর মামা লাল মিয়া ও তাঁর সন্তানদের জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ভোর রাত ৩টার দিকে লাল মিয়ার দুই ছেলে মাসুদ মিয়া (৪০) ও এরশাদ মিয়া (৩৮) বাবুল মিয়ার ঘরে ঢুকে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হামলাকারীরা বাবুল মিয়াকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার সময় বাবুল মিয়ার স্ত্রী নূরজাহান বাধা দেন। এ সময় তাঁরা নূরজাহানকে জবাই করে হত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডাক চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা বাবুল মিয়ার ছেলে মারুফ মিয়া (১৮) ও তাঁর বৃদ্ধ মা পরিষ্কারেরন্নেচ্ছা (৭০) এগিয়ে আসলে তাঁদেরকেও বেধরক মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরজাহানকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বাবুল মিয়া, তাঁর ছেলে ও মাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে লাল মিয়া ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করেছে।
বাবুল মিয়ার ছোট ভাই মো. দীন ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আমার মামা লাল মিয়া ও তাঁর ছেলেরা আমার বড় ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এসময় ভাবী তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁরা ভাবীকে জবাই করে হত্যা করেছে। প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার ভাইয়ে পেট কেটে ভূরি বের হয়ে গেছে। ভাতিজার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। আমার বৃদ্ধ মায়ের মাত ভেঙে যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
অভিযুক্ত লাল মিয়ার ছেলেরা পলাতক থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি এবং পুলিশ হেফাজতে থাকায় লাল মিয়ার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাহেব আলী পাঠান জানান, ‘ঘটনায় জড়িত অভিযোগে লাল মিয়া ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অন্যদের আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এ নিয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’