মানসিক ভারসাম্যহীন দেবর নাহিদ জোয়ার্দার (৩৫) এর বটির পিঁড়ির আঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ গেল ভাবী রেশমা খাতুনের (৩৮)। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার রতনপুর গ্রামে গত রবিবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৬.০০ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
মাথায়, ঘাড়ে ও হাতে আঘাত প্রাপ্ত রেশমা খাতুনকে চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে রেশমা খাতুনকে শুঘ্রিবপুর বোনের বাড়িতে রাখা হয়। শুঘ্রিবপুর অবস্থান কালে বুধবার তাঁর অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় বেলা ১১.৩০ টার সময় রেশমা খাতুন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

জানা যায় রতনপুর গ্রামের মনোয়ার জোয়ার্দারের ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে। বড় ছেলের নাম আব্দুল হামিদ জোয়ার্দার (৪০) এবং ছোট ছেলের নাম নাহিদ জোয়ার্দার (৩৫)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী রেশমার চাচী শ্বাশুড়ি (যিনি চিকিৎসার সময় রেশমার সাথে ছিলেন) জানান- প্রতিদিনের ন্যায় ঐদিনও আব্দুল হামিদের স্ত্রী রেশমা খাতুন ইফতার ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ দেবর নাহিদ এসে জানতে চায় কি রান্না করা হচ্ছে? ভাবী রেশমা খাতুন দেবর নাহিদকে জানান পোল্ট্রি মুরগির মাংস রান্না করা হচ্ছে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাহিদ বটির পিঁড়ি দিয়ে রেশমার মাথায়, ঘাড়ে ও হাতে আঘাত করে। এসময় ভাবী বলতে থাকেন “ও সোনা আমি তো কোন অন্যায় করিনি, আমি তো তোমার কিছু বলিনি, তুমি আমার মারছো কেন?” ভাবী রেশমা খাতুন অচেতন হয়ে পড়লে নাহিদ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে নিকটবর্তী মাঠের মধ্যে পার্শ্ববর্তী অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম ওরফে পান্না মাস্টারের সাথে দেখা হয়।
ঐ সময় রেজাউল ইসলাম ওরফে পান্না মাস্টারকে নাহিদ বলেন- ” বড় ভাবিকে (রেশমা খাতুন) মারে আসলাম, বোধহয় মরে গেছে। আমাদের মটরসাইকেল, গরু-বাছুর, মালামাল সব দেখে রাখবেন।” পান্না মাস্টার জানতে চান, তোমার ভাবীকে কি জন্য মারলে? নাহিদ স্বভাব সুলভ ভাবেই বলেন – শয়তান, বেয়াদব মহিলা। আব্দুল হামিদ ও রেশমা দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ে। মেয়ে হাদিয়া খাতুন দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, বড় ছেলে স্বাক্ষর অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং ছোট ছেলের বয়স মাত্র ২ বছর।
হাদিয়া খাতুন জানান- আমার দাদু চোখের চিকিৎসার জন্য যশোর যেতে চাইলে , আমার মা দাদুকে বলেন, আপনি চলে গেলে নাহিদ তো আমাকে মেরেই ফেলবে। সেই কথা শুনে দাদু নাহিদ চাচাকে অনুনয় বিনয় করে বলেন যাতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে। দাদু রবিবারের দিন দুপুরে চোখের চিকিৎসার জন্য যশোর গেলে ঐদিন বিকালেই নাহিদ চাচা এই ঘটনা ঘটান। প্রতিবেশী আকমাল খান ওরফে ভুটান খান বলেন – আনুমানিক ২০ দিন আগে নাহিদ হাসুয়া দিয়ে হামিদকে তাড়া করে। হামিদ দৌড়ে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং দরজা বন্ধ করে দেন।
নাহিদ দরজার উপর কোপাতে থাকেন। এ সময় ভুটান খান এসে নাহিদের কাছ থেকে হাসুয়া কেড়ে নেন। নাহিদের ভয়ে তাঁর ৪ বোন বাড়ীতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। নাহিদ খরচ-খরচা একদমই পছন্দ করে না। মানসিক ভারসাম্যহীন নাহিদকে এক সময় চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা জানান নাহিদকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এমন ঘটনা আরো ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়ির সবাইকে সে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করেছে। বেশ কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী মহিদুলের বৃদ্ধা আঙ্গুল এক কোপে কেটে ফেলেছিল বলে জানা যায়।