ঝালকাঠি সদর উপজেলার এলজিইডি বিভাগের আয়রন ব্রীজ পূনর্বাসন (আইবিআরপি) প্রকল্পের ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে অভিযোগের আঙ্গুল নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তরের সিনিয়র সহঃ প্রকৌশলী শিপলু কর্মকারের দিকে।
এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাস্টবিল্ড এ টেন্ডারের মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছে। এর প্রেক্ষিতে প্রকল্প পরিচালক শরীফ জামাল উদ্দিন অলোক বিষয়টি ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানতে চেয়ে চিঠি দেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তবে ইতিমধ্যেই অস্থায়ী দায়িত্ব প্রাপ্ত আইবিআরপি প্রকল্প পরিচালক আদনান আকতারুল আজিমকে দূর্নীতির দায়ে বহিস্কার করা হয়েছে।
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার দোগলচিড়া বেতরা খালের উপর এই গার্ডার ব্রীজের টেন্ডার হয় ১৩ নভেম্বর ২০২৪ সনে। ওটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডারে অংশ নেয় একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সমদর প্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয় ফাষ্টবিল্ড ও ইস্মার্ট কনষ্ট্রাকশন লিঃ।
এ বিষয়ে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, টেন্ডার আইডি-১০৩৩১৭৫ এর দুজন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দরপত্র দাখিল করে। তারা দুজনই সমদর দেয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ই-স্মার্ট কনঃ লিঃ এবং ফাষ্ট বিল্ড। উভয়ের দর ৪,৫৯,৪০,৩০৩.৮০০/-। এখানে টেন্ডারে লক্ষ করা যায় ই-স্মার্ট এলজিইডি থেকে টেন্ডারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। তাছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ে তাদের (নোহা) নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড গোপন করে টেন্ডার ক্যাপাসিটি এই টেন্ডারে দেখায়। এ অবস্থায় মূল্যায়ন বিষয়টির সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদনে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি তদন্ত করে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক শরীফ জামাল উদ্দীন অলোককে নির্দেশনা দেন। তাই প্রকল্প পরিচালক অভিযোগের বিষয়ে জানাতে ঝালকাঠি এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেন।
যদিও নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, এ চিঠি আমাকে নয় সরাসরি সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলীর নামে দেয়া হয়েছে। তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়েছে পিডি স্যার। কারণ সিনিয়র প্রকৌশলী টেন্ডার কমিটির সভাপতি। প্রকল্প পরিচালকের চিঠি প্রদানের বিষয়টি স্বিকার করে সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, এই টেন্ডার মূল্যায়নের সব কাজ আমার পূর্বের প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ তৈরী করে দুজনের মধ্যে ই-স্মার্টকে সিলেক্ট করে গেছেন। আমি তাতে স্বাক্ষর করেছি মাত্র। তার সমস্ত ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। তবে ই-স্মার্টকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু বিষয়টি মূল্যায়নের পর্যায়ে তাই কিছু বলা যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প পরিচালক আমাকে কোন চিঠি দেয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে। কারণ তিনি নির্বাহী পদে আছেন। চিঠি দেখতে চাইলেও তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে চিঠিতে এই টেন্ডারে স্বচ্ছতা গ্রহনের বিষয় কতখানি জানতে চাওয়া হয় বলে তিনি জানান।
ফাষ্টবিল্ড কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী শিপলু ইস্মার্ট লাইসেন্সের অভিযোগের বিষয় গুলো চাপিয়ে রেখে দুটি টেন্ডারের মূল্যায়ন করে তৎকালীন দায়িত্ব প্রাপ্ত পিডি আদনানের কাছে পাঠান। তিনি একটি গ্রহন করে আরেকটি রিটেন্ডার দেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে একই লাইসেন্সে ত্রুটি থাকা সত্বেও একটি গ্রহন করে আরেকটি কিভাবে রিটেন্ডার হয়।
এ বিষয়ে সাসপেন্ড হওয়া প্রকল্প পরিচালক আদনান বলেন, আমার এই মূহুর্তে চাকরি নেই। সাসপেনশনে আছি। তিনি প্রকল্পের নাম জানতে চান। আইবিআরপি প্রকল্প জানালে তিনি বলেন এটা আমার নলেজে নেই। এ বিষয়ে বর্তমান পিডির সাথে কথা বলার কথা জানিয়ে লাইন কেটে দেন।
অপর দিকে ঝালকাঠি এলজিইডির সাবেক সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ জানান, গার্ডার ব্রীজ নির্মান প্রকল্পের টেন্ডারে ইস্মার্ট ও ফাষ্টবিল্ড সমদর হয়ে ছিল। আমি শুধু ওপেন করে বদলী হয়ে চলে আসছি। মূল্যায়নের কোন কাজ আমি করার প্রশ্নই উঠেনা। আমার আসার পর মূল্যায়ন করেছেন বর্তমান প্রকৌশলী। মূল্যায়ন রিপোর্টের কোথাও আমার কোন স্বাক্ষর নেই। এখন আমার উপর দায় চাপানো হলে তা সম্পূর্ন মিথ্যা কথা। আমি এখনই সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব। আমি ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ ঝালকাঠি থেকে বদলী হয়ে চলে আসি। আর মূল্যায়ন হয়েছে তার পর।