স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ কৃষকের বিভিন্ন সমস্যার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির দক্ষিণ- পশ্চিমা ঞ্চলের আন্দোলন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ শে ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কপালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আন্দোলন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিলেট ভাসান পানিতে জেলেদের মাছ ধরার আন্দোলনসহ অসংখ্য আন্দোলনের নেতা শাহজাহান কবির।
আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক বিল ডাকাতিয়া আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক তাপস বিশ্বাস, বিএম শামীমুল হক, খুলনা জেলা সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, নড়াইল জেলার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির, যশোর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট যশোর জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, জাতীয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি খুলনা জেলা সভাপতি খাদিজা আক্তার, কৃষক সংগ্রাম সমিতি মনিরামপুর থানা সভাপতি পরিতোষ দেবনাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকার, মাস্টার পীর মো: গাজী, প্রদত্ত বিশ্বাস, চঞ্চল রায়। পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিবিড় কান্তি বিশ্বাস।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘদিন যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলাবদ্ধতার শিকার। এ বছর তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সরকার অদ্যবধি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেনি। যেটুকু করেছে তা লোক দেখানো মাত্র। সমস্যা সমাধানের নামে অদ্যাবধি যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
এখনও পানি সেচে ও নদী খনন করে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাও ব্যর্থ হয়েছে এবং এলাকার একাধিক বিলে এবারও বোরোধান আবাদ করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে গৃহীত সকল প্রকল্প যে অপরিকল্পিত এবং নদীর নাব্যতা রক্ষা ও ভূমি গঠনে ব্যর্থ তা প্রমাণিত হয়েছে। পূর্ব বিল খুকশিয়ায় গৃহীত প্রকল্পের কারণে পশ্চিম বিল খুকশিয়ায় জলাবদ্ধ ও কাটিং পয়েন্ট উঁচু হয়েছে।
এ সকল ব্যর্থতার কারণে বিল কপালিয়ায় প্রকল্প করতে গেলে গণ প্রতিরোধের মুখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। বরং ঋণের দায় ও জনগণের সংকট সুতীব্র করেছে। আমরা ১৯৮৮ সালে বিল ডহুরি, ১৯৯০ সালে বিল ডাকাতিয়া, ১৯৯৭ সালে আগরহাটি-ভায়না বিলের ওয়াপদা বাঁধসহ বিল পাঁজিয়া, বিল বুড়ুলি, বিল পাথরাসহ অসংখ্য বিলের ওয়াপদা বাঁধ উচ্ছেদ করে অবাধ জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির মাধ্যমে নদীর নাব্যতা, বিলের ভূমি গঠন, পানির বিষাক্ততা সমস্যা সমাধানের পথ সামনে এনেছি।
এই মুহুর্তে যশোরসহ এ অঞ্চলের জনজীবন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা অতীব জরুরি। নেতৃবৃন্দ ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা তথা বিল ডাকাতিয়াসহ ২৭ ও ৫৭ বিলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে এলাকার কৃষক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক নদী আইনানুসারে গঙ্গা বা পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকল দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান। ভবদহসহ এতাদ্বঞ্চলের জলাবদ্ধতার জন্য দায়ি তথা পানি প্রবাহে বাধাদানকারী সকল স্লুইচ গেট ও ওয়াপদা বাধ উচ্ছেদ করে অবাধ জোয়ার-ভাটা চালুর দাবিতে আন্দোলন অগ্রসর করার আহ্বান জানান।
জলাবদ্ধ এলাকাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা, ঋণ মওকুফ, নদ-নদী ও তার শাখা প্রশাখা খনন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উচ্ছেদ, অবৈধ মৎস্য চাষ বন্ধ, নদী দখল মুক্ত করাসহ ৮ দফা দাবিতে মে মাস পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মার্চ মাসব্যাপি জনমত গড়ে তোলা এবং গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলা,জলাবদ্ধতা ও জিকে সেচ প্রকল্প-এর সমস্যা সমাধানে এবং সার-ডিজেল-কীনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্য কমানো ও কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির দাবিতে এপ্রিল-মে মাসব্যাপি হাটসভা-পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি; ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিল ইউএনও-এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং ৭ মে বুধবার সকল জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান ও ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।