নীলফামারী প্রতিনিধি:
শহীদদেরকে দলীয় স্বার্থে বিভক্ত না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “অনেকে ৫ আগস্টের শহীদদের নিজেদের দলের দাবি করে, আমরা এ কাজ করবো না। শহীদরা জাতীয় সম্পদ, আমরা তাদেরকে দলের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না।”
আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) বুধবার বিকেলে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা জামায়াতের আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৫ আগস্টের পর যদি বাংলাদেশ পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়ে যেত, তাহলে পরবর্তীতে এত আন্দোলনের দরকার হতো না। কিন্তু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি বলেই এই যুদ্ধ চলছে।”
তিনি অভিযোগ করেন যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। “এই অবস্থায় যদি বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচন একদম খতম হয়ে যাবে, বিশৃঙ্খলা বাড়বে, রক্তের বন্যায় বাংলাদেশ ভেসে যাবে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।”
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদগুলো আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তারা নিজেদের নিকট আত্মীয়দের জোরপূর্বক নির্বাচিত করে দখল করে রেখেছিল। এখন দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এত মানুষের দায়িত্ব প্রশাসনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। জনগণ যাদের প্রতিনিধি হিসেবে মানে না, তারা এখন ঘুষের হার বাড়িয়ে মানুষকে আরও হয়রানি করছে।
ফলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ ভেঙে যাওয়ায় প্রতিদিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। আমাদের রাজনীতি জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর জন্য নয়, বরং জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য।” সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই যেখানে কাস্ট হওয়া ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন হবে। এতে ছোট দলগুলোকেও কারো করুণার পাত্র হতে হবে না, তারা যথাযথভাবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।” তিনি অভিযোগ করেন, “পেশী শক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম্যে সন্ত্রাসীরা নির্বাচিত হয়ে আসে।
সংসদ সদস্যদের কাজ দেশের জন্য আইন প্রণয়ন করা, কিন্তু অনেকে সে যোগ্যতা রাখে না। ফলে দেশের জনগণ কালো আইনের ফাঁদে পড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।” দেশের যুবকদের বেকারত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সমাজের ৪০ ভাগই যুবক, যার ৬০ ভাগই বেকার। এর মূল কারণ হলো সুশিক্ষার পরিবর্তে কুশিক্ষা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, “আমরা যদি দেশ পরিচালনার সুযোগ পাই, তাহলে নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতার উপর জোর দেব।
যেন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরির সুযোগ পায়।” নারীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শনকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কিছু লোক প্রচার করে যে দেশে কোরআনের শাসন হলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। আমাদের পরিবারে মা-বোনেরা ইসলাম মেনে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, এটা বন্ধ করার জন্যই এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এ দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না। যে কেউ এ দেশে জন্মগ্রহণ করলে, সে দেশের গর্বিত নাগরিক। মুসলমানদের বলব, অন্য ধর্মের মানুষকে কষ্ট দেবেন না। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যারা এই দেশকে মেজরিটি-মাইনরিটি ভিত্তিতে বিভক্ত করতে চেয়েছে, তারাই সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। তিনি অতীতের সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাদের মাথার ওপর কেউ আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। আমরা এমন একটি সম্মানের স্বাধীন বাংলাদেশ চাই যেখানে জনগণের ঐক্য অটুট থাকবে।
ডোমার উপজেলা জামায়াতের আমীর খন্দকার আহমাদুল হক মানিকের সভাপতিত্বে ও নীলফামারী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম, অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।