নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাষা-আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সুসংহত স্ফুরণ এবং বাঙালির আত্ম-আবিষ্কারের সূচনালগ্ন। এই আন্দোলনের গুরুত্ব বা মহত্ব কেবল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষা’ করার দাবিতে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিল-সংগ্রাম ও শহীদদের আত্ম-বিসর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন নিয়ে বিভাগপূর্বকালেই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে শুরু হয়েছিল চিন্তা-ভাবনা এবং এই আন্দোলনের তাৎপর্য ভাষা বা সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের দাবি ছাড়িয়ে মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ের মধ্যেই তার পরিণতি খুঁজেছিল।
অর্থাৎ ভাষা-আন্দোলন কেবল সাংস্কৃতিক-আন্দোলন কিংবা বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন নয়, অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইও বটে। তাছাড়া আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নাগরিক সমাজের আন্দোলন মনে হলেও সারাবাংলার গণমানুষের ক্ষোভ এবং বিক্ষোভের জ্বালামুখ হিসেবে কাজ করেছিল এই ভাষা-আন্দোলন। অর্থাৎ ভাষা-আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বশ্রেণির ও সর্বস্তরের জনগণের আন্দোলন। পূর্ব-বাংলার গণতান্তিক আন্দোলন এবং জাতীয় মুক্তি-আন্দোলন বিকাশের ইতিহাসে ভাষা-আন্দোলন এজন্যই এত তাৎপর্যপূর্ণ।
একুশ আমাদের অনির্বাণ অগ্নি। এই অগ্নিশিখা থেকে আগুন সংগ্রহ করতে হয় আমাদের সবসময়। এ-দেশের সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথেই প্রত্যক্ষপরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকে একুশ। তাই একুশ বাঙালির একটি মহত্তম দিন। আত্মজাগরণের দিন। স্বাধিকারের স্বপ্ন বপনের দিন। সঙ্ঘশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারণের দিন। সর্বোপরি বাঙালির আত্মপরিচয়ের নতুন ঠিকানা। ভাষা-আন্দোলন ও একুশকে স্মরণ করতেই নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিল আয়োজনে পালিত হয়েছে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫’।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। ভাষা-আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন ও স্মরণার্থে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন-অর-রশীদ এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও সিএসই বিভাগ পৃথক পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অস্থায়ী দুটি হল, শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মহান একুশের কবিতা পাঠ এবং গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পালিত ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫’ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
উল্লেখ্য, ভাষা-আন্দোলন এবং একুশে নিহত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম, ট্রেজারার ড. আনিছা পারভীন। এভাবেই বর্ণিল আয়োজনে পালিত হয় বাঙালির অনির্বাণ অগ্নি ‘একুশ’ তথা ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫’।